ছবি : বসির আহাম্মেদ
ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহের বিভিন্ন উপজেলায় বাণিজ্যিক ভাবে শুরু হয়েছে সজিনা পাতার চাষ। সজিনা গাছকে বলা হয় পুষ্টির ডিনামাইট। আর সজিনা পাতাকে বলা হয় অলৌকিক পাতা। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে পুষ্টিকর হার্ব। গবেষকরা বলছেন, সজিনা পাতা হচ্ছে নিউট্রিশন্স সুপার ফুড। পুষ্টি ও ওষুধি গুণাগুণের কারণে সুপার ফুড সবার পরিচিত এই সজিনা পাতা।
ঝিনাইদহে বিভিন্ন উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয়েছে সজিনা পাতার চাষ। এই জেলায় অধিকাংশ বাড়ির পাশে পরিত্যক্ত জমি, রাস্তার পাশে কৃষকরা সজিনা গাছ লাগিয়ে থাকেন। তবে এবার বাণিজ্যিকভাবে জমিতে সজিনার চাষ করা হচ্ছে পাতা সংগ্রহের জন্য। জেলার শতাধিক কৃষক সজিনাকে বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ করছেন। কৃষকরা কাচা সজিনা পাতা প্রতি কেজি বিক্রি করছেন ৮ টাকা দরে। আর প্রতি কেজি শুকনা পাতা বিক্রি করছেন ৪০০ টাকা কেজি। লাভজনক হওয়ায় গৃহিনীরা বাড়ির কাজের পাশাপাশি এই কাজে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। কৃষক ও গৃহিনীদের কাছ থেকে সজিনা পাতা ক্রয় করছে জিটি মরিংগা নামের একটি প্রতিষ্ঠান।
কথা হয় কালীগঞ্জ উপজেলার ভোলপাড়া গ্রামের সজিনা চাষী তৌহিদুর রহমানের সাথে। তিনি জানান, বাড়ির পাশে প্রায় ২ বিঘা জমিতে সজিনা চাষ করছেন। মূলত তিনি পাতা বিক্রির জন্য এটি চাষ করছেন। তবে সজিনা গাছ থেকে সজিনাও তিনি বিক্রি করবেন। হাইব্রিড ওডিসি-৩ জাতের সজিনা তিনি চাষ করেছেন। তৌহিদ জানান, এতে সজিনা পাতা ও ডাটা দুটোই পাওয়া যায়। প্রতি কেজি কাচা পাতা বিক্রি করেন ৮-১০টাকা দরে। আর শুকনো পাতা প্রতি কেজি ৪০০ টাকা দরে বিক্রি করেন। বারোমাসি সজিনা গাছ লাগানোয় বারোমাসই পাতা ও ডাটা সংগ্রহ করা যায়। তৌহিদ জানান, সজিনা চাষে তেমন খরচ নেই। এছাড়াও এর মধ্যে সাথি ফল হিসেবে পেয়াজ, রশুন, মশুরি চাষ করা যায়।
পূর্ব বলরামপুর গ্রামের কৃষানী মাধুরি রানী জানান, তিনি নিজের বাড়ির আঙিনায় সজিনা চাষ করছেন। এছাড়াও এলাকার নারীদেও বাড়ির আঙিনায় সজিনা চাষ করতে উৎসাহ দিচেছন। তিনি জানান, নারীদের কাছ থেকে সজিনা কাচা পাতা ৮-১০ টাকা দরে এবং শুকনো পাতা ৪০০ টাকা কেজি ক্রয় করে নিচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি অফিসার মো. মাহবুব আলম রনি জানান, পুষ্টি ও ওষুধি গুণাগুণের কারণে পরিচিতি আছে সজিনা গাছের। মূলত কার্টিং রোপন বা বীজ রোপন করে সজিনা গাছ তৈরি করা যায়। তিনি আরো জানান, কৃষি অফিসের পরামর্শে অনেক কৃষক, গৃহিনী বাড়ির আঙিনায় ও রাস্তার পাশে এই গাছ রোপন করে। তেমন রোগবালাই হয় না এবং খুব একটা পরিচর্যা করা লাগে না। তিনি জানান, কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে কৃষক/কৃষাণীদের সজিনা গাছ লাগানোর জন্য উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।
কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: আলমগীর হোসেন জানান, সজিনাতে ক্যালশিয়াম,খনিজ লবন,আয়রনসহ প্রোটিন ও শর্করা জাতীয় উপাদন রয়েছে। এছাড়া গাছের বাকল, পাতা, ফুল, ডাটার ওষুধি গুণ রয়েছে। তিনি জানান, সজিনা পাতা এন্টিসেপটিক হিসেবে ব্যবহার করা যায়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সজিনার পাতার পাউডার দিয়ে ক্যাপসুল তৈরি করে বানিজ্যিকভাবে বাজারজাত করছে।