ছবি : সংগৃহীত
বাণিজ্যিক দোকানে বেচা-বিক্রি কয়েকগুণ
কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে অভিযোগ
বিনোদন কেন্দ্রগুলো এখন জমজমাট
বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। পুরোদমে শুরু হয়েছে ভ্রমণ মৌসুম। অনেক দিন পর দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও স্বাভাবিক। এমন সুযোগ পেয়ে ভ্রমণে ছুটছেন মানুষ। কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত, কুয়াকাটায় সমুদ্রসৈকত ও সাজেকসহ জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রগুলোয় পর্যটকের ঢল নেমেছে। সংশ্লিষ্ট এলাকায় অধিকাংশ হোটেল-মোটেলে কক্ষ খালি নেই। এদিকে, সুযোগ বুঝে ‘গলাকাটা’ ভাড়া আদায় করছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা।
সমুদ্রসৈকত ছাড়াও কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ, দরিয়ানগর পর্যটন পল্লি, হিমছড়ির ঝরনা, পাথুরে সৈকত ইনানী-পাটুয়ারটেক, টেকনাফ সমুদ্রসৈকত, ঐতিহাসিক প্রেমের নিদর্শন মাথিন কূপ, নেচার পার্ক, ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক, রামুর বৌদ্ধপল্লিসহ বিনোদন কেন্দ্রগুলো এখন জমজমাট। রুম না পেয়ে বাধ্য হয়ে কক্সবাজারও ছাড়তে হচ্ছে অনেককে।
কক্সবাজারের সচেতন মহল দাবি করছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কৃত্রিম সংকট তৈরি করে হোটেল ভাড়া দ্বিগুণ করেছে। প্রশাসনের অভিযান না থাকায় গলাকাটা বাণিজ্য করার সুযোগ পেয়েছে বলে অভিযোগ তোলা হয়।
তিন দিন ধরে মানুষের নগরীতে পরিণত হয়েছে কক্সবাজার। শহর ও আশপাশের হোটেল, মোটেল ও গেস্টহাউসগুলোয় ভাড়া দেওয়ার মতো কোনো কক্ষ খালি নেই। হাজারে হাজারে পর্যটক এসে অনেকেই খোলা আকাশের নিচে, কিংবা সমুদ্রের বালুকাবেলায় রাত কাটাচ্ছেন। হোটেল না পেয়ে অনেকেই ফিরে যাচ্ছেন অন্য কোনো পর্যটনস্পটে।
হোটেলে অন্য সময়ের চেয়ে কয়েকগুণ দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। যে হোটেলের কক্ষভাড়া এক থেকে দুই হাজার টাকায় পাওয়া যেত, সেসব হোটেলের ভাড়া এই মুহূর্তে পাঁচ থেকে ১০ হাজার টাকায় উঠেছে।
অন্যদিকে বাস, ট্রেন ও ফ্লাইটেও একই অবস্থা চলছে। একেবারে নরমাল বাস ছাড়া মানসম্মত কোনো বাসেই সিট মিলছে না। তার আগেই বুকিং হয়ে গেছে। ট্রেনেও একই অবস্থা। ফ্লাইটেও কোনো সিট খালি নেই। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এত মানুষ ফ্লাইটের টিকিট খুঁজছেন যে, বিমান ও ট্যুরিজম সাইটগুলোর ফ্লাইট বিভাগে ঢোকাই যাচ্ছে না। সাইটে ঢুকতে চাইলে অতিরিক্ত ট্রাফিক দেখানো হচ্ছে।
এদিকে কক্সবাজার শহর ও সমুদ্রসৈকত ছাড়াও কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ, দরিয়ানগর পর্যটন পল্লী, হিমছড়ির ঝরনা, পাথুরে সৈকত ইনানী-পাটুয়ারটেক, টেকনাফ সমুদ্রসৈকত, টেকনাফ থানার ঐতিহাসিক প্রেমের নিদর্শন মাথিন কূপ, নেচার পার্ক, ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক, রামুর বৌদ্ধবিহারগুলোসহ বিনোদন কেন্দ্রগুলোয়ও মানুষের জমজমাট সমাগম ঘটছে। কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন রুটেও জাহাজগুলোয় সেন্টমার্টিনগামী পর্যটকের জোয়ার লেগেছে।
কক্সবাজার শহরের কলাতলী হোটেল-মোটেল জোন ও সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে দেখা গেছে, এক হোটেল থেকে আরেক হোটেলে ছুটছেন পর্যটকরা। এমনও পাওয়া গেছে, ৫০টি হোটেল ঘুরেও রুম পাননি পর্যটকরা। এছাড়া সৈকতের বালিয়াড়িতে ভিড় করেছেন লাখো পর্যটক। সৈকতের নীল জলরাশিতে মানুষের ভিড়। সবাই মেতেছেন বাঁধভাঙা আনন্দ-উচ্ছ্বাসে। অনেককেই দেখা গেছে, হোটেলে কক্ষ না পেয়ে সৈকতের বালিয়াড়িতে ব্যাগ-লাগেজ রেখে সমুদ্রে নেমেছেন। অনেকেই সৈকতের বালিয়াড়িতে রাত কাটিয়ে দিয়েছেন।
পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও হোটেলমালিকরা বলছেন, চলতি মাসের শুরুতে পর্যটকরা কক্সবাজারমুখী হয়েছেন। এখন প্রতিদিনই লাখো পর্যটক অবস্থান করছেন। সাপ্তাহিক কিংবা বিশেষ ছুটিতে পর্যটকের চাপ দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ হচ্ছে। তাই হোটেল কক্ষেরও সংকট দেখা দিয়েছে।
পর্যটকের বাড়তি চাপের কারণে পর্যটন জোন কলাতলী, শহরের প্রধান সড়ক, বাস টার্মিনাল, মেরিন ড্রাইভসহ বিভিন্ন এলাকা যানজটে অচল হয়ে পড়েছে। শহরে কয়েক দিন ধরে ১০ মিনিটের কোনো পথ যেতে এক ঘণ্টারও বেশি সময় লাগছে। এ অবস্থায় যানজট নিয়ন্ত্রণ, শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা ও পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে।
জেলা প্রশাসনের বিচকর্মীদের সহকারী সুপারভাইজার বেলাল হোসেন মনে করেন, বৃহস্পতিবার, শুক্রবার ও শনিবার প্রতিদিন কম করে হলেও এক লাখ পর্যটক সমুদ্রসৈকতে নেমেছেন। তার ভাষায়, শহরের কলাতলী, সুগন্ধা ও লাবণী পয়েন্ট সৈকতে শুক্রবার ও শনিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কমপক্ষে দেড় লাখ পর্যটক নেমেছেন।
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আবুল কালাম সাংবাদিকদের বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ট্যুরিস্ট পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে। যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কাজ করে যাচ্ছে পুলিশ।
বাংলাবার্তা/এমআর