
ছবি: সংগৃহীত
ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দেশে জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্যগুলোর হোটেল এবং রিসোর্টগুলো প্রায় ৭০ শতাংশ বুকিং পেয়েছে। তবে, গত বছর এই হার ছিল ৮৫ শতাংশের কাছাকাছি, যা এবার কিছুটা কমেছে। পর্যটন সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গরমের বৃদ্ধি, জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির কারণে এবং নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ থাকায় অনেকেই ঈদে ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন না।
ব্যবসায়ীদের মতে, বিদেশ ভ্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এই কারণে দেশের পর্যটন খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেকেই ঈদে দীর্ঘ ছুটি কাটাতে বিদেশে চলে যাচ্ছেন, যার ফলে দেশীয় পর্যটন স্থানগুলোর দিকে আগ্রহ কমেছে। তবে, ট্যুর অপারেটররা আশা করছেন, ঈদের আগে বুকিং ৯০ শতাংশে পৌঁছাতে পারে।
শ্রীমঙ্গল, সুন্দরবন, কক্সবাজার এবং বান্দরবান অঞ্চলে বুকিং বেড়েছে, তবে সাজেক, কুয়াকাটা এবং সিলেট অঞ্চলে আগ্রহ কম। সাজেকে আগুন লাগার ঘটনায় পর্যটকদের আগ্রহ কিছুটা কমেছে। অন্যদিকে, সিলেটে বর্ষাকাল এবং কুয়াকাটায় শীতে পর্যটকদের আগমন সাধারণত বেশি হয়।
কক্সবাজার, দেশের প্রধান সমুদ্র সৈকত, বর্তমানে পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় গন্তব্য হয়ে উঠেছে। সেখানে প্রায় ৫০ শতাংশ হোটেল কক্ষ ভাড়া হয়ে গেছে। হোটেল দেলোয়ার প্যারাডাইসের হেড অব অ্যাকাউন্টস জাহিদ ইসলাম রাসেল জানান, ঈদের ছুটির জন্য পর্যটকদের কাছ থেকে ভালো সাড়া মিলছে। কক্সবাজার হোটেল-মোটেল অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কলিমউল্লাহ জানিয়েছেন, ঈদের পরের সপ্তাহের জন্য অর্ধেক কক্ষ সংরক্ষিত রাখা হয়েছে।
ঢাকার একঘেয়েমি থেকে মুক্তি পেতে কক্সবাজারে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছেন অনেকেই। তাদের একজন আরিফুজ্জামান বলেন, "ঢাকায় আমাদের জীবন বাসা থেকে অফিস আর অফিস থেকে বাসা পর্যন্ত। ঈদের ছুটিতে সময়টুকু সাগর ও খোলা আকাশের নিচে কাটাতে চাই।"
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটা প্রস্তুত রয়েছে পর্যটকদের স্বাগত জানাতে। সেখানে ৬০-৭০ শতাংশ কক্ষ ইতোমধ্যে ভাড়া হয়ে গেছে। সিকদার রিসোর্ট অ্যান্ড ভিলাসের সহকারী মহাব্যবস্থাপক আল-আমিন খান উজ্জ্বল জানিয়েছেন, শিগগিরই তাদের পুরো রিসোর্ট ভাড়া হয়ে যাবে। কুয়াকাটা ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশনের জহিরুল ইসলাম আশা করছেন, এবারের ঈদে কুয়াকাটায় কয়েক লাখ পর্যটক আসবে।
কক্সবাজার এবং কুয়াকাটায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা শক্তিশালী করা হয়েছে। কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের পরিদর্শক জাহাঙ্গীর আলম জানিয়েছেন, ঈদে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে এবং বাড়তি টহলের ব্যবস্থা থাকবে। কুয়াকাটায় বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে ট্যুরিস্ট পুলিশের ইনচার্জ সাখাওয়াত হোসেন তপু জানিয়েছেন।
এদিকে, বিদেশে যাওয়ার কারণে দেশের পর্যটন খাতে কিছুটা কমতি হতে পারে। গত ঈদের তুলনায় অগ্রিম বুকিং ৩০-৩৫ শতাংশ কমেছে এবং বিদেশে প্যাকেজগুলোর সংখ্যা বেড়েছে ৫০ শতাংশ। দিগন্ত ট্রাভেল ফ্রিকের মাইনুল ইসলাম রাজু জানান, নিরাপত্তা উদ্বেগ এবং ভারত ভিসার সীমাবদ্ধতা কারণে বাংলাদেশি পর্যটকরা থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও শ্রীলঙ্কার মতো দেশগুলিতে যেতে শুরু করেছেন।
ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) সভাপতি মো. রাফেউজ্জামান বলেন, "গত বছরের তুলনায় ব্যবসা চার ভাগের তিন ভাগ হতে যাচ্ছে," যা দেশের পর্যটন খাতের দুরবস্থা নির্দেশ করছে। বিশেষ করে জুলাই মাসে গণঅভ্যুত্থানের পর মানুষের ভ্রমণের আগ্রহ কমে গেছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে জিডিপিতে পর্যটনের অবদান ছিল তিন শতাংশ এবং মোট কর্মসংস্থানে আট শতাংশ।
এখনো কিছুটা আশাবাদী পরিস্থিতি রয়েছে, তবে নিরাপত্তা, গরমের বৃদ্ধি এবং বিদেশ ভ্রমণের কারণে দেশীয় পর্যটন সেক্টর কিছুটা হতাশার মধ্যে আছে। তবে, ঈদের ছুটিতে স্থানীয় পর্যটন স্থানগুলো আগামী দিনগুলোতে অপেক্ষাকৃত বেশি জমজমাট হতে পারে, যদি বুকিং হার বৃদ্ধি পায়।
বাংলাবার্তা/এমএইচ