’অঞ্জলি লহ মোর সঙ্গীতে’ ভাস্কর্য (ছবি: বাংলাবার্তা)
কাজী নজরুল ইসলাম হলেন দ্রোহ, প্রেম, সাম্য ও মানবতার কবি। তারই স্মৃতি ঘেরা ত্রিশালের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়। ময়মনসিংহের এই ত্রিশাল যেমন কবির সাহিত্যের স্মৃতি বহন করে ঠিক তেমনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি স্থাপনাই নজরুলের সৃষ্টির প্রতিনিধিত্ব করে। প্লেটো তাঁর ‘রিপাবলিক’ গ্রন্থে বলেছেন- ‘সঙ্গীত আত্মার গহীনে স্পর্শ করে’। নজরুলের তেমনি একটি হৃদয়স্পর্শী গান 'অঞ্জলি লহ মোর সঙ্গীতে'।সেই গানের নামানুসারে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপিত হচ্ছে ‘অঞ্জলি লহ মোর’ নামক একটি মনোমুগ্ধকর ভাস্কর্য। এটিকে স্থাপন করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ও কলা ভবন এর সামনে থাকা পদ্ম পুকুরেরউপর। যা স্থানটির সৌন্দর্যকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
এই পুকুরপাড় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি ভালবাসার জায়গা। ইতোপূর্বে এটি পরিত্যক্ত জায়গার মতো ছিল। রাস্তাগুলো ছিল জীর্ণশীর্ণ, আর পুকুরটি ছিল আগাছাতে পরিপূর্ণ। ফলে শিক্ষার্থীদের চলাচলে যেমন অসুবিধা হতো তেমনি রাত নামলেই মনে হতো যেন সেই কাল্পনিক ঠাকুরমার ঝুলির ভূতের আড্ডা। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর কলা ভবন, বিজ্ঞান ভবন এবং প্রশাসনিক ভবনের সামনে পুকুরটির সৌন্দর্য বর্ধনের পরিকল্পনা হাতে নেন। ‘অঞ্জলি লহ মোর’ সেই পরিকল্পনারই একটি অংশ।
ভাস্কর্যটিকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের উচ্ছাসের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের ডিন অধ্যাপক ড. তপন কুমার সরকার বলেন, শিক্ষার্থীরা আসলে অনেক উচ্ছ্বসিত। এটা সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলিতে গড়ে ওঠা একটি বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে সাংস্কৃতিক যে পরিমণ্ডল আছে, শিল্পের যে চর্চা আছে তা আমাদের এই ধরনেরউদ্যোগ নিতে প্রনোদিত করে। এখানে এইরকম অনেকগুলো বিভাগ আছে যেমন, চারুকলা বিভাগ, সঙ্গীত বিভাগ, থিয়েটার এণ্ড পারফরম্যান্স বিভাগ, ফিল্ম এণ্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগ। কাজেই যেহেতু সাংস্কৃতির একটা আবহাওয়া এখানে বিরাজ করে সেই প্রেক্ষাপটে এই ধরনের ভাস্কর্যগুলো অনেকটাই প্রাসঙ্গিকআমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য। সেই জায়গা থেকে আমার মনে হয় এটি অত্যন্ত ভালো একটি উদ্যোগ। এই পুকুর, লাল ইটের রাস্তা আর ‘অঞ্জলি লহ মোর’ ভাস্কর্য সবকিছু মিলে আমার মনে হয় এটি একটি নান্দনিক আর দৃষ্টিনন্দন পরিবেশ তৈরি করবে।
ভাস্কর্যটি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তাসনিন নেহা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব থেকে পছন্দের জায়গা এটি আমার। সবুজে ঘেরা নিরিবিলি পরিবেশ যা সবসময় আমায় মুগ্ধ করে। আর এখন সৌন্দর্য বর্ধন আর ভাস্কর্যটি স্থাপনের ফলে জায়গাটি আরও পরিপূর্ণ হয়ে উঠলো। ক্লাস,পরীক্ষা কিংবা সারাদিনের ক্লান্তি শেষে বন্ধুরাসহ যখন এখানে বসি মনে হয় যেন সব ক্লান্তি এক নিমিষেই দূর হয়ে যায়। তবে জায়গাটিতে আরও ভালো করে আলোকসজ্জার কাজ করা যেতে পারে। সেটি হলে জায়গাটি আরও নিরাপদ হবে। যদিও এখনো পুরোপুরি সম্পন্ন হয়নি ভাস্কর্যটির সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ, এখন চলছে আলোকসজ্জা এবং রং করার কাজ। ভাস্কর্যটির কাজ শেষ হলে স্থানটি একটি আলাদা রূপ পাবে। বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার, শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ আশেপাশের সবাইকে এর সৌন্দর্য মুগ্ধ করবে। এটি হয়ে উঠবে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রাণকেন্দ্র এবং দর্শনীয় স্থান। সকলের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠবে এই ‘অঞ্জলি লহ মোর’ ভাস্কর্য।
আরও পড়ুন: নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিশু পার্ক উদ্বোধন
ভাস্কর্যটির সকল কাজ প্রায় শেষের পথে। শিগগির উদ্বোধন হবে সকলের আগ্রহের তুঙ্গে থাকা এই ভাস্কর্যটি। খোঁজ নিয়ে জানা যায় ভাস্কর্যটি উদ্বোধনের পর এখানে একটি সংগীতের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা করাহচ্ছে যা সন্ধ্যার পর বাজতে থাকবে। এমনটি হলে সেটি যেমন আকর্ষণ করবে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারকে তেমনি জায়গা করে নিতে পারবে প্রতিটি সৌন্দর্য পিপাসু মানুষের মনে।
বাংলাবার্তা/এসএ