ছবি: সংগৃহীত
মেহেরপুর জেলায় দেখা দিয়েছে বীজ সংকট। গমের বীজ বপনের ভরা মৌসুমে তাই দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা।
জানা গেছে, কয়েক বছর ধরে মেহেরপুরে হুইট ব্লাস্ট রোগের প্রাদুর্ভাবে গম আবাদে লোকসান গুনতে হচ্ছে চাষিদের। পরে কৃষি বিভাগ থেকে ব্লাস্ট প্রতিরোধী জাত নির্বাচিত করা হলে গমের আবাদ বাড়ে। তবে নির্দিষ্ট জাতের বীজ সংকটের অজুহাতে দ্বিগুণ দামে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা।
কৃষকদের অভিযোগ, এক শ্রেণির ব্যবসায়ীরা গম বীজের চাহিদাকে পুঁজি করে নিম্নমানের বীজ প্যাকেট করে চাষিদের কাছে বিক্রি করছেন। আর ব্যবসায়ীরা বলছেন, চলতি মৌসুমে গমের আবাদ বেড়ে যাওয়ায় বীজের চাহিদাও বেড়েছে। ফলে বীজ সংকট দেখা দিয়েছে।
তবে কৃষি বিভাগ বলছে, কোনো অসাধু ব্যবসায়ী যদি চাহিদাকে পুঁজি করে বেশি দামে বীজ বিক্রি ও মানহীন বীজ বিক্রির চেষ্টা করে, তবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার গমচাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খাদ্য ঘাটতি পূরণ ও বাজারে গমের দাম পাওয়ায় চাষিরা গম চাষে ঝুঁকছেন। ফলে অন্য বছরের তুলনায় এবার গমের বীজের চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ। এতে বীজ ভাণ্ডারগুলোতে দেখা দিয়েছে বীজ সংকট। আগ্রহী কৃষকরা দোকানে দোকানে ঘুরে দ্বিগুণ দামে বীজ সংগ্রহ করছেন। গত বছর যে গম বীজ বিক্রি হয়েছে ৬০-৭০ টাকায়, চলতি বছর সেই বীজ বিক্রি হচ্ছে ১০০-১২০ টাকায়। তারপরও বীজের গুণগত মান নিয়ে আছে সংশয়। অভিযোগ উঠেছে, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী খোলা বাজার থেকে গম কিনে মোড়কজাত করে কৃষকদের সঙ্গে প্রতারণা করছেন।
গাংনীর মহব্বতপুর গ্রামের চাষি শমসের আলী বলেন, আমি প্রতি বছরই গম চাষ করি। চলতি বছর দুই বিঘা জমিতে গম চাষ করেছি। বাজারে বীজ সংকটের অজুহাতে দেড়শ টাকা কেজি দরে বীজ কিনেছি।
হিন্দা গ্রামের নজরুল ইসলাম বলেন, আটার দাম অনেক বেড়ে যাওয়ায় গম আবাদ দ্বিগুণ হয়েছে। তাছাড়া গত কয়েক বছর ধরে গমে ব্লাস্ট রোগ হচ্ছে। কৃষি অফিসের পরামর্শে ব্লাস্ট প্রতিরোধী গম বপনের চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু উন্নত মানের বীজ পাওয়া যাচ্ছে না। বাজা বীজ কিনতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন চাষিরা। আবার কৃষি অফিস থেকে যে প্রনোদণা দেওয়া হচ্ছে তা সবার কপালে জুটছে না।
তিনি আরও বলেন, মেহেরপুরে হুইট ব্লাস্ট রোগের প্রাদুর্ভাবে কয়েক বছর ধরে গমের শীষ শুকিয়ে ফলন বিপর্যয় ঘটছে। তারপর থেকে গম আবাদে মুখ ফিরিয়ে নেন চাষিরা। পরে কৃষি বিভাগ থেকে ব্লাস্ট প্রতিরোধী জাত বারি গম ৩৩ মেহেরপুর জেলার জন্য নির্ধারণ করা হয়। গত তিন বছর জেলার চাষিরা বারি-৩৩ জাতের গম আবাদ করে ভালো ফলন পাচ্ছেন। হঠাৎ গমের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং ধান আবাদে খরচ বেশি হওয়ায় গমের আবাদ বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। চাষিরা ৩৩ জাতের গম বীজ না পেয়ে বারি গম ২৬, বারি গম ৩০ আবাদ করছেন। তবে এসব বীজও আর বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না।
ভাটপাড়া গ্রামের চাষি ইয়ারুল ইসলাম বলেন, বারি গম ৩৩ না পাওয়ায় সংসারের খাদ্য হিসেবে সঞ্চয় করা গম বীজ হিসেবে জমিতে বপন করেছি।
গাংনীর চৌগাছা বীজ ভাণ্ডারের স্বত্বাধিকারী মালেক হোসেন বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে গম আমদানি কমে যাওয়ায় দেশের বাজারে গমের দাম বেড়েছে লাফিয়ে লাফিয়ে। বতর্মানে গমের বাজার চলছে ২৬শ টাকা মণ দরে। তাই চাষিরা গম চাষে আগ্রহী বেশি। তাছাড়া গ্রামের অধিকাংশ চাষি বাড়িতে সংরক্ষণ করা বীজ বপন করতেন। সম্প্রতি কৃষকের বাড়িতে থাকা গমে বেশি ব্লাস্ট রোগ দেখা দিচ্ছে। তাই চাষিরা বাড়ির বীজ বাদ দিয়ে কৃষি বিভাগ ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করছেন। ফলে অন্য বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে গম বীজের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বীজ সংকট দেখা দিয়েছে।
বামন্দী বাজারের সৈকত বীজ ভাণ্ডারের মালিক সৈকত আলী বলেন, ব্লাস্ট প্রতিরোধী গম বীজ ৩৩ বাজারে নেই। এই সুযোগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী উন্নত মানের বীজের মোড়ক ব্যবহার করে নিম্নমানের বীজ চাষিদের কাছে বেশি দামে বিক্রি করছে। বাধ্য হয়ে কৃষকরা তাই কিনছে। এতে গমের ফলন ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসার লাভলী খাতুন বলেন, চলতি মৌসুমে কৃষকদের গম চাষে আগ্রহ বেড়েছে। এতে চাহিদার তুলনায় বীজ কম হওয়ায় সংকট দেখা দিয়েছে। উপজেলায় এবার গম চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮ হাজার হেক্টর জমিতে। চাহিদাকে পুঁজি করে কোনো অসাধু ব্যবসায়ী যদি মানহীন বীজ বাজারজাত করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।