মা রেগে চলে গেছে বাবার বাড়ি। দুধ খাইয়ে শিশুর কান্না থামানোর চেষ্টা করছে দাদি। ছবি: মো. মনোয়ার হোসেন
মহম্মদপুর (মাগুরা): নাম রাখা হয়েছে সুমাইয়া। বয়স সবে দুই মাস। দুধের বাচ্চা সে। মা’, মায়ের কোল, মায়ের পরম স্নেহ-মমতা এবং মাতৃদুগ্ধই এ নবজাতকের সবচে’ বেশি প্রয়োজন। কিন্তু কী অমানবিক আর নিষ্ঠুরতা ওই দুধের শিশুর সাথে! মা’ থেকেও যেন নেই! স্বামী-স্ত্রীর বিবাদে মাতৃদুগ্ধ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে নিষ্পাপ দুধের শিশু।
স্বামীর ঘরে নবজাতক শিশুকে রেখে নিষ্ঠুর এক গৃহবধূ বাপের বাড়িতে চলে যাওয়ায় মায়ের অভাবে ওই শিশুর কান্না থামছে না। অমানবিক ও হৃদয়ে নাড়া দেওয়ার মতো অপ্রত্যাশিত এ ঘটনাটি ঘটেছে মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার সূর্যকুন্ডু গ্রামে। স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে বণিবনা না হওয়ায় ভেঙে যেতে বসেছে সংসার।
শনিবার (১৩ মে) সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, নবজাতক শিশুটির দাদি ছাকি বেগমের কোলে দুধের বাচ্চা সুমাইয়া চিৎকার করে কাঁদছে। কান্না থামানোর খুব চেষ্টা করে যাচ্ছেন তিনি। কিন্তু শিশুটির বুকফাটা কান্নাতো তার মা’কে কাছে পাবার আকুতি জানান দিচ্ছে।
জানাযায়, উপজেলার সূর্যকুন্ডুু গ্রামের আব্দুর রহিম বিশ্বাসের ছেলে ওয়ালিউল্লাহ বিশ্বাস সিঙ্গাপুর থেকে ফিরে বছর দুয়েক আগে ফলশিয়া গ্রামের ইউনুস মোল্যার মেয়ে সাদিয়া খাতুনকে বিয়ে করেন। শুরু ভালোই চলছিল তাদের দাম্পত্য জীবন-সংসার। এরপর ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে কলহ-বিবাদ শুরু হয়। এক পর্যায়ে মানসিকভাবে খানিকটা অসুস্থ্য হয়ে পড়ে ওয়ালিউল্লাহ বিশ্বাস। এরপর থেকে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অশান্তি দেখা দেয়। উভয়ের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ বাড়তে থাকে। এরই মধ্যে সাদিয়া খাতুন জন্ম দেয় কন্যা সন্তান। নাম রাখা হয় সুমাইয়া। কিন্তু তাদের মধ্যে দূরত্ব বাড়তেই থাকে। এক পর্যায়ে সাদিয়া সাফ জানিয়ে দেয় সে আর ওয়ালিউল্লাহর সংসারে থাকবেন না।
গত ৭ মে রাতে সূর্যকুন্ডু গ্রামে ওয়ালিউল্লাহর বাড়িতে উভয় পরিবারের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে শালিসি বৈঠক বসে। কিন্তু সাদিয়ার মন না গলার কারণে দুধের শিশু সমিাইয়াকে রেখে রাতেই তাকে বাপের বাড়িতে নিয়ে যান তার স্বজনরা। গর্ভধারিণী মা’ তার দুধের বাচ্চাকে নিতে রাজি হননি। এ অবস্থায় সংসারটি ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। অবশ্য এই পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার পেছনে উভয় পরিবার থেকেই পরস্পর বিরোধী কথা উঠেছে।
এদিকে দুই মাসের দুধের বাচ্চা সুমাইয়াকে রেখে তার মা’ সাদিয়া খাতুন বাপের বাড়িতে অবস্থান করার কারণে ওই নবজাতক শিশুটিকে নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন পিতা ওয়ালিউল্লাহ ও তার পরিবার। শিশুটির দাদি ছাকি বেগম নাতিকে বুকে আগলে রেখে যত্ন নিচ্ছেন। ডাক্তারি পরামর্শে বাজার থেকে ট্যাকটোজেন দুধ কিনে ফিডারে করে খাওয়াচ্ছেন। কিন্তু মায়ের অভাব তো পূরণ করা সম্ভব নয়। শিশুটি প্রায় সময়ই কাঁদতে থাকে।
শিশুটির দাদি ছাকি বেগম বলেন, ‘অ্যাট্টুক (এতটুকু) জিপুত (বাচ্চা) থুয়ে (রেখে) বিটার (ছেলে) বৌ কোন আক্কেলে (বুদ্ধিতে) চলে গিলো (গেল) বুজতি (বুঝতে) পারলাম না।’
প্রতিবেশি আরজিনা বলেন, ‘এইটুকু বাচ্চাকে রেখে তার মা’ বাড়ের বাড়িতে গিয়ে মাতৃত্বকে অপমান করেছে। সে এটা মোটেও ঠিক করেনি। বাচ্চাটিকে সাথে করে নিয়ে যাওয়া উচিৎ ছিলো তার।’
শিশুর পিতা ওয়ালিউল্লাহ্ বলেন, ‘কোন দোষে সে চলে গেল তাইতো জানি না। বাচ্চাটিকে কিভাবে সুস্থ্য রাখবো এবং মানুষ করবো এটা নিয়ে চিন্তা বাড়ছে।’
এ বিষয়ে মেয়ের বাড়ির এলাকার বাসিন্দা, দীঘা ইউনিয়নের ফলশিয়া ২ নং ওয়ার্ডে মেম্বার মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘শেষ শালিসে আমি উপস্থিত ছিলাম। সাদিয়ার স্বামী ওয়ালিউল্লাহ্র মানসিক সমস্যা আছে বলে মনে হয়েছে। তিনি তার স্ত্রী ও নবজাতক সন্তানের ঠিকঠাক দেকভাল করে না। সাদিয়ার ইচ্ছেতে তাকে তার বাপের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বিয়ের সময় ছেলেকে দেওয়া সব মালপত্রও তারা মেয়ে পক্ষের কাছে বুঝে দিয়েছে। যার কারণে এই সংসার আর জোড়া লাগবে বলে মনে হয় না।’
এ বিষয়ে সাদিয়ার মা’ শেফালি বেগম বলেন, ‘জামাইয়ের মানসিক সমস্যা দেখা দেওয়ায় একবার পাবনা নিয়ে চিকিৎসা করিয়ে এনেছি আমরা। নানাভাবে তাদেরকে সহায়তাও দেওয়া হয়েছে। তাদের সংসার টেকানোর জন্য অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু জামাই আমার মেয়ে ও নবজাতক বাচ্চার সাথে ভালো ব্যাবহার না করায় এবং মেয়ের ইচ্ছেতে শেষ পর্যন্ত আমরা তাকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে এসেছি।’