ছবি : বসির আহাম্মেদ
ঝিনাইদহ: ভারতের ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার শেখ হাসিনা ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক আক্তারুজ্জামান অলৌকিক ভাবে বেঁচে গেছেন। তিনি ওড়িশার বালেশ্বর জেলার বাহাঙ্গা বাজার এলাকায় তিন ট্রেনের ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা কবলিত ট্রেনের যাত্রী ছিলেন।
দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া মহেশপুর সরকারি পদ্মপুকুর শেখ হাসিনা ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক আক্তারুজ্জামান। তিনি মহেশপুর উপজেলার কাজীরবেড় ইউনিয়নের পাকরাইল গ্রামের বাসিন্দা। শিক্ষক আক্তারুজ্জামানের স্ত্রী নুর জাহানের চিকিৎসার জন্য ভারতে যান এবং করমন্ডল এক্সপ্রেস ট্রেনে করে ভেলর যাচ্ছিলেন।
শুক্রবারে দুর্ঘটনা কবলিত ট্রেনযাত্রা নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা বর্ননা করতে গিয়ে বলেন, ‘সন্ধ্যায় ট্রেনের বগিতে বসে হঠাৎ শুনতে পেলাম বিকট শব্দ। সেই সঙ্গে ট্রেনটি জোরে ঝাঁকুনি দিল। সামনে কিছু একটা হয়েছে এটা দেখার চেষ্টা করলাম, ভেসে আসছিল কান্না আর চিৎকারের শব্দ। কিন্তু একটা সময় তাদের সরিয়ে দেওয়া হলো। শুধু যাওয়ার সময় চোখের সামনে দেখতে পেলেম হতাহতদের নিয়ে টানাটানি। আহতরা চিৎকার করছেন, তাদের উদ্ধারে কাজ করে যাচ্ছেন রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্থানীয়রা। তিনি বলেন, শনিবার সকাল ৭টায় তাদের আরেকটি ট্রেনে তুলে দেওয়া হয়। তারা এখন ভেলরের পথে রয়েছেন।
মোবাইল ফোনে মো. আক্তারুজ্জামান জানান, স্ত্রী নুর জাহানের চোখের সমস্যা। বেশ কয়েকবার ভারতে চিকিৎসা করিয়েছেন। এবার সিদ্ধান্ত নেন ভেলর গিয়ে চিকিৎসা করাবেন। সেই ইচ্ছায় গত পহেলা জুন ভারতে যান। এরপর ট্রেনের টিকিট নিয়ে শুক্রবার দুপুর শালিমার স্টেশনে হাজির হন।
শুক্রবার দুপুর ৩টা ২০মিনিটে তাদের নিয়ে করমন্ডল ট্রেনটি স্টেশন থেকে ছেড়ে যায়। সন্ধ্যা ৭টার দিকে তারা যখন উড়িষ্যার বালেশ্বর জেলার বাহানাগাঁ এলাকায় পৌঁছান, তখন ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে। তারা বিকট শব্দ ও ঝাঁকুনি অনুভব করেন। ট্রেনের মধ্যে থাকা হাজার হাজার মানুষ কান্নাকাটি শুরু করেন। তারাও বুঝতে পারেন ট্রেন দুর্ঘটনা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, তারা ছিলেন ২-এ এসি বগিতে। তাদের সামনে ছিল আরও কয়েকটি বগি। তারা দ্রুত ট্রেন থেকে নেমে সামনে কী ঘটেছে দেখার চেষ্টা করেন। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যে সেখানে উপস্থিত হওয়া স্থানীয়রা তাদের যেতে বাধা দেন। ওই সময় স্থানীয়রা উদ্ধার কাজ শুরু করেন। আক্তারুজ্জামান জানান, ট্রেন থেকে তাদের সরিয়ে দেওয়ার পর তারা বাসযোগে কিছুটা দূরে এক এলাকায় অবস্থান নেন। সেখান থেকে পরদিন (শনিবার) সকালে ভুবনেশ্বর স্টেশন থেকে পন্ডিশ্রী নামে আরেকটি ট্রেনে তুলে দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে তারা এখন ভেলরের পথে রয়েছেন। তিনি আরও জানান, ঘটনাস্থল থেকে বাসে উঠা পর্যন্ত সময়টুকু তাদের আতঙ্কে কেটেছে। সামনে কী হচ্ছে, তা তারা কিছুই বুঝতে পারছিলেন না। ট্রেনে অনেক বাংলাদেশি ছিল, তারা কেমন আছে সেটাও জানার সুযোগ ছিল না।
আক্তারুজ্জামানের স্ত্রী নুর জাহান জানান, তারা যে বগিতে ছিলেন সেখানে দুইজন বাংলাদেশি ছিল। পরে তাদের বাসে তুলে দেওয়ার পর জানতে পারেন, দুর্ঘটনা কবলিত ট্রেনটিতে অনেক বাংলাদেশি ছিলেন। তবে কারও কোনো খবর জানতে পারেননি।
শুক্রবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে উড়িষ্যার বালেশ্বর স্টেশন থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে বাহানাগাঁ স্টেশনের কাছে এই দুর্ঘটনা ঘটে। ভয়াাবহ এই ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত বেড়ে প্রায় ৩০০ জন হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৯০০ জন।
দুর্ঘটনাস্থলে উদ্ধারকাজে ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়। ভারতীয় সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা কর্নেল এসকে দত্ত বাংলাদেশী গনমাধ্যমকর্মীদের জানান, সেনাবাহিনী রাত থেকে উদ্ধারকাজে রয়েছে এবং কলকাতা থেকে আরও সেনা সদস্য ডাকা হয়েছে।
শুক্রবার (২ জুন) সন্ধ্যা ৭ টা ২০ মিনিটে ওড়িশার বালেশ্বর জেলার বাহাঙ্গা বাজার এলাকায় তিন ট্রেনের ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনাটি ঘটে। ট্রেন গুলোর একটি শালিমার থেকে চেন্নাইগামী সেন্ট্রাল করমন্ডল এক্সপ্রেস, অপরটি বেঙ্গালুর থেকে হাওড়াগামী সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস এবং অন্যটি মালবাহী ছিল।