ছবি সংগৃহীত
নীলফামারী: বাড়তে শুরু করেছে তিস্তা নদীর পানি। এতে বিপৎসীমার দশমিক ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পানি। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টিপাতে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। পানি নিয়ন্ত্রণে ব্যারেজের ৪৪টি জলকপাট খুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
সোমবার (১৯ জুন) সকাল ৯টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫২ দশমিক ১০ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার (৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার) দশমিক ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সকাল ৬টায় তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার (৫২.২০ সেন্টিমিটার) দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি পরিমাপক নূরুল ইসলাম বলেন, শুক্রবার (১৬ জুন) রাত থেকে তিস্তার পানি বাড়তে শুরু করেছে।
রোববার (১৮ জুন) রাতে পানি বিপৎসীমার দশমিক ২০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও আজ সোমবার সকাল থেকে পানি বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সকাল ৯টায় পানি ১০ সেন্টিমিটার কমে বর্তমানে বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দুপুরে পানি আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ডালিয়ায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৫০ মিলিমিটার।
অপরদিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দোমহনী বন্যা পূর্বাভাস ও বন্যা সর্তকীকরণ কেন্দ্রের বরাত দিয়ে তিনি জানান, ভারতে গজলডোবা ও মেখলিগঞ্জ (বাংলাদেশ সীমান্ত পর্যন্ত) তিস্তা ব্যারাজে বেশ কিছু জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছে। ভারত তাদের এলাকার মেখলিগঞ্জ পয়েন্টে তিন দিন ধরে হলুদ সংকেত জারি রেখেছে। বর্তমানে মেখলিগঞ্জে তিস্তার পানি ৬৫.৫০ সেন্টিমিটার (৬৫.৯৫ বিপৎসীমা) ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। এ ছাড়া ভারতে দোমহনী তিস্তা পয়েন্টে সকাল ৮টায় তিস্তার পানি ৮৫.৪৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে নিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এই পয়েন্টের তিস্তার বিপৎসীমা ৮৫.৯৫।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদ্দৌলা বলেন, তিস্তার পানি বেড়েছে। ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে পানি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
এদিকে হঠাৎ তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নীলফামারীর ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলা এবং লালমনিরহাট জেলার কালিগঞ্জ, হাতীবান্ধা, আদিতমারী এলাকার নদীর চরাঞ্চলের নিচু এলাকার অনেক বসতবাড়িতে পানি উঠেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এ ছাড়া ফসলের ক্ষেত পানিতে ডুবে গিয়ে ফসলহানির শঙ্কায় চিন্তিত কৃষকরা। হঠাৎ পানি বাড়ার ফলে গবাদি পশুপাখির খাবার নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা।
ডিমলা উপজেলার পূর্বছাতনাই ইউনিয়নের ঝাড়শিংহেশ্বর চল এলাকার আবু মুসা বলেন, বৃহস্পতিবার থেকে হঠাৎ উজানের পানি আসতে থাকে ফলে নদীতে পানি বৃদ্ধি পায়। শনিবার পানি কমলেও রবিবার রাত থেকে পানি হু-হু করে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
একই গ্রামের আইয়ুব আলী বলেন, দীর্ঘ সাত মাস পরে হঠাৎ তিস্তায় পানি বৃদ্ধি ফলে নিম্নাঞ্চলগুলোতে পানি প্রবেশ করেছে। গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি ও ছোট বাচ্চাদের নিয়ে বিপদে আছি।
টেপাখড়িবাড়ি চরখড়িবাড়ি গ্রামের গ্রামের নুর আলম বলেন, নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে কিছু যায়গায় ভাঙন দেখা দিয়েছে।
পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খান বলেন, ইউনিয়নের চল ঝাড়সিংহেশ্বর চরসহ বেশ কিছু এলাকায় পানি প্রবেশে করেছে। ওসব এলাকাগুলোতে সবসময় খোঁজ-খবর রাখছি। নিম্নাঞ্চলে বসবাসরতদের উঁচু স্থানে আশ্রয় নেওয়ার জন্য ইতিমধ্যে মাইকিং করা হয়েছে।