ছবি সংগৃহীত
মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে একটি বাড়িতে প্রায় সাড়ে ৪ ঘণ্টা অভিযান শেষে ১৩ জনকে আটক করেছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট।
শনিবার (১২ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে অভিযান শেষে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন সিটিটিসির প্রধান মো. আসাদুজ্জামান।
এর আগে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের পূর্ব টাট্টিউলি গ্রামে একটি বাড়িটি ঘিরে রাখা হয়। পরে শনিবার সকাল ৬টা থেকে অভিযান শুরু করে সিটিটিসি। আটকদের মধ্যে ৬ জন নারী ও ৪ জন পুরুষ রয়েছেন। এদের মধ্যে ৩টি শিশু রয়েছে। তাদেরও হেফাজতে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিটিটিসি প্রধান।
আটক জঙ্গিরা হলেন- সাতক্ষীরা জেলার সদর থানার দক্ষিণ নলতা গ্রামের ওমর আলীর ছেলে শরীফুল ইসলাম (৪০), একই গ্রামের শফিকুল ইসলামের স্ত্রী আমিনা বেগম (৪০), তার মেয়ে মোছা. হাবিবা বিনতে শফিকুল (২০), কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা থানার কানলা গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে হাফিজ উল্লাহ (২৫), নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানার রসুলপুর গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে খায়রুল ইসলাম (২২), খায়রুলের স্ত্রী মেঘনা (১৭), সিরাজগঞ্জ জেলার কাজীপুর থানার মাইজবাড়ী গ্রামের সাইফুল ইসলামের ছেলে রাফিউল ইসলাম (২২), পাবনা জেলার আটঘরিয়া থানার শ্রীপুর গ্রামের আব্দুস ছাত্তারের স্ত্রী শাপলা বেগম (২২), নাটোর জেলার সদর থানার চাঁদপুর গ্রামের সোহেল তানজীম রানার স্ত্রী মাইশা ইসলাম (২০) ও বগুড়া জেলার শরিয়াকান্দি থানার নিজবলাই গ্রামের সুমন মিয়ার স্ত্রী মোছা. সানজিদা খাতুন (১৮)। এ ছাড়া হেফাজতে নেওয়া তিন শিশু হচ্ছে- খায়রুল ইসলামের মেয়ে আবিদা (১), আব্দুস ছাত্তারের মেয়ে হুজাইফা (৬) ও জুবেদা (১৮ মাস)।
সিটিটিসির প্রধান বলেন, বাড়িটিতে অভিযান চালিয়ে ৩ কেজি বিস্ফোরক দ্রব্য, ৫০টি ডেটোনেটর, প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল, কমান্ডো বুট, বিভিন্ন প্রশিক্ষণ সরঞ্জামাদি, বিপুল জিহাদি বই ও ধারালো অস্ত্রসহ নগদ ৩ লাখ ৬১ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া ওই বাড়িতে দীর্ঘদিন অবস্থা করার জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের মজুদ ছিল।
তিনি বলেন, নতুন একটি উগ্রবাদী সংগঠন অনেক লোককে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পর মৌলভীবাজারের একটি পাহাড়ে তারা আস্তানা গেড়েছে- এমন খবরের ভিত্তিতে আমরা ‘অপারেশন হিলসাইড’ চালাই।
তিনি আরও বলেন- এটি নতুন একটি সংগঠন, নাম হচ্ছে ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’। বাংলাদেশে এই সংগঠন নতুন করে কার্যক্রম শুরু করেছে। সংগঠনটি মূল ব্যক্তির নামও জানা গেছে। এর সঙ্গে আরও যারা জড়িত আছেন তাদেরও আটক করে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- মৌলভীবাজার জেলা পুলিশ সুপার মো. মনজুর রহমান, গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) কামরুজ্জামান, সিটিটিসির এডিসি নাজমুল ইসলাম, সোয়াট টিমের এডিসি জাহিদ, মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মোহসিন ও কুলাউড়া থানার ওসি মো. আব্দুছ ছালেক। এছাড়া দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম, কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহমুদুর রহমান খোন্দকার ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মেহেদী হাসান।
ওসি মো. আব্দুছ ছালেক বলেন, আটকদের ঢাকায় নেওয়া হচ্ছে। সেখানে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের আদালতে নেওয়া হবে। কর্মধা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুহিবুল ইসলাম আজাদ বলেন, ওই বাড়িতে থাকা লোকজন অন্য জেলার বাসিন্দা। তারা প্রায় দুই-তিন মাস আগে এখানে এসে বাড়ি বানিয়ে অবস্থান করছেন।