ছবি সংগৃহীত
মাত্র তিন দিন আগে উদ্বোধন হওয়া কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলে মধ্যরাতে কার রেসিং প্রতিযোগিতায় জড়িত সাতটি কারকে চিহ্নিত করেছে টানেল কর্তৃপক্ষ। এসব কারের নম্বর উল্লেখ করে সেগুলোর অজ্ঞাতনামা চালকদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
বুধবার (১ নভেম্বর) রাতে নগরীর কর্ণফুলী থানায় মামলাটি দায়ের করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল কর্তৃপক্ষের সহকারী ম্যানেজার মো. জাহাঙ্গীর আলম (৫০)। সড়ক পরিবহন আইনে মামলাটি দায়ের করা হয়।
মামলার এজাহারে কারের নম্বর উল্লেখ করে সাতটি কারের অজ্ঞাতনামা চালকদের বিরুদ্ধে এ মামলা দায়ের করা হয়। সাত প্রাইভেট কারের মধ্যে আছে- চট্ট মেট্রো-গ-১২-৯০৪৩, চট্ট মেট্রো-ঘ-১১-৫৭০২, ঢাকা মেট্রো-খ-১১-৮৯৩৫, ঢাকা মেট্রো-খ-১২-১৮১৪, চট্ট মেট্রো-গ-১৩-৩৫৭৩, চট্ট মেট্রো-গ-১৪-২২৫৪ ও ঢাকা মেট্রো-ভ-১১-০২১৭। মামলায় আরও দুই থেকে তিনটি প্রাইভেট কারের চালকসহ তাদের সহযোগীদের আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, টানেল কর্তৃপক্ষ ও রক্ষণাবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান পরামর্শক্রমে মোটরযানের গতিসীমা সর্বোচ্চ ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার নির্ধারণ করেন। এ বিষয়ে টানেলের প্রবেশ মুখ, ভেতরসহ বিভিন্ন দৃশ্যমান স্থানে গতিসীমা সর্বোচ্চ ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটারের সাইনবোর্ড সাঁটানো হয়।
এতে আরও বলা হয়, ২৯ অক্টোবর রাত অনুমান ১১টায় ক্রসিং এলাকায় ৭ থেকে ১০টি প্রাইভেটকার নিয়ে অজ্ঞাতনামা চালক এবং তাদের সহযোগী পরস্পর যোগসাজশে বিভিন্ন স্থানে টানেল কর্তৃপক্ষের সাঁটানো সাইনবোর্ডের সর্বোচ্চ গতিসীমা লংঘন করে। গাড়িগুলো রেসিং, ওভারটেকিং ও বিপজ্জনকভাবে চালানোসহ যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। পরে গাড়িগুলোর অজ্ঞাতনামা চালক টোল পরিশোধ করে রাত ১১টা ৫৫ মিনিটে টানেলের ভেতর প্রবেশ করে। রেসিং, ওভারটেকিং ও বিপজ্জনকভাবে চালানোসহ যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। পরে টানেলের সিসিটিভি মনিটরিং কর্তৃপক্ষ ঘটনাস্থলে থাকা সিসি ক্যামেরায় ধারণকৃত ভিডিও ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে সাতটি গাড়ির নম্বর শনাক্ত করে। আরও দুই-তিনটি প্রাইভেট কারের রেজিস্ট্রেশন নম্বর শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। এছাড়াও ঘটনার বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২৯ অক্টোবর মধ্যরাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের ভেতর কার রেসিং প্রতিযোগীতায় মেতে উঠেছিল উঠতি বয়সী ছেলেরা। দামি স্পোর্টস কার নিয়ে বিপজ্জনক গতিতে প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠে তারা। মোটর রেসের এমন বেশ কয়েকটি ভিডিও ৩০ অক্টোবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এই রেসে প্রায় ১০টি প্রাইভেটকার অংশ নেয়।
জানা গেছে, ‘দ্য স্লো কিডস’ নামে একটি পেজে টানেলের ভেতর ও বাইরে রেসের ভিডিওটি আপলোড করা হয়। ভিডিওটি শেয়ার দিয়ে হলিউড সিনেমা ‘দ্যা ফাস্ট অ্যান্ড দ্য ফিউরিয়াস’র সঙ্গে তুলনা করা হয়। পরে ভিডিওটি ভাইরাল হয়।
কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ জহির হোসেন বলেন,‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলেল ভেতর কার রেসিং প্রতিযোগিতার ঘটনায় টানেল কর্তৃপক্ষ মামলা করেছে। এতে সাতটি প্রাইভেটকারের নম্বর উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা চালকদের বিরুদ্ধে এ মামলা করা হয়। দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গত শনিবার (২৮ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১টায় চট্টগ্রামের পতেঙ্গা প্রান্তে ফলক উন্মোচনের মধ্যে দিয়ে বহুল প্রতীক্ষিত টানেল উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরদিন রবিবার (২৯ অক্টোবর) সকাল ৬টা থেকে টানেল দিয়ে যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
টানেল নির্মাণে শুরুতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৮ হাজার ৪৪৬ দশমিক ৬৪ কোটি টাকা। পরে তা বৃদ্ধি পেয়ে ১০ হাজার ৩৭৪ দশমিক ৪২ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। এর মধ্যে চীনের এক্সিম ব্যাংক ২ শতাংশ সুদে ৫ হাজার ৯১৩ দশমিক ১৯ কোটি টাকা দিচ্ছে। বাকি টাকা দেয় বাংলাদেশ সরকার।