কক্সবাজারসহ চারটি সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সতর্ক সংকেত আরও বাড়তে পারে। ছবি: কক্সবাজার প্রতিনিধি
গেল ২৪ অক্টোবর কক্সবাজারে তাণ্ডব চালায় ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’। হামুনের ওই তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় সবকিছু। সেই ক্ষত চিহ্ন না শুকাতেই আবারও একটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার আশঙ্কা রয়েছে। যার ফলে শঙ্কিত কক্সবাজারের উপকূলের মানুষ।
কক্সবাজার আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. ইমাম জানান, ‘বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি শক্তিশালী হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপের পর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এজন্য কক্সবাজারসহ চারটি সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সতর্ক সংকেত আরও বাড়তে পারে।’
বুধবার (১৬ নভেম্বর) সকাল থেকে কক্সবাজারের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। সারাদিক দেখা মেলেনি সূর্যের। নিম্নচাপের প্রভাবে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। এতে থমকে ছিল মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন। বঙ্গোপসাগর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার শত শত নৌকা ও ট্রলার উপকূলে ফিরে এসেছে।
কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় জেলে সাহাবুদ্দিনের সাথে। তিনি বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা শেষে সবে মাত্র মাছ ধরা চলছে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে সকালে ঘাটে ফিরেছে শতাধিক ট্রলার। আবহাওয়া খারাপ মানে জেলেদের কপালও খারাপ হয়। এখন হাত গুটিয়ে বসে থাকা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। মহাজন থেকে ধার করে পরিবারের খরচ চালাতে হবে।’
মহেশখালীর শাপলাপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘ঘূর্নিঝড় হামুনের কারণে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা আমরা এখনো কাটিয়ে উঠতে পারিনি। সরকারও আমাদের সহায়তা করেনি। এখন যদি আরেকটি ঘূর্ণিঝড় আসে তাহলে কোথায় যাবো আমরা।’
চকরিয়ার কৃষক সাইফুল আখন্দ বলেন, ‘হামুন আমার সব ফসল নষ্ট করেছে। এখন কোনমতে মাথা তুলে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। তারমধ্যে আবারও ঘূর্ণিঝড় হওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে। এতে লবণ চাষী, কৃষক ও মাছের ঘেরের চাষীরা আতংকে আছে।’
কক্সবাজার শহরের ১ নং ওয়ার্ড সমিতিপাড়ার বাসিন্দা রহিম উদ্দিন বলেন, ‘এখনো পরিস্থিতি ভালো দেখা যাচ্ছে। যদি পরিস্থিতি খারাপ হয় তাহলে আমাদের যাওয়ার কোন জায়গা থাকবে না। আমরা সবসময় ভাঙা—গড়ার খেলায় আছি।’
নিম্নচাপের কারণে সাগর উত্তাল রয়েছে। যার কারণে টেকনাফ—সেন্টমার্টিন নৌরুটে পর্যটকবাহী জাহাজসহ সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন প্রশাসন। এতে বুধবার (১৫ নভেম্বর) বেড়াতে গিয়ে দ্বীপে থেকে যাওয়া প্রায় সাড়ে চার শতাধিক পর্যটক আটকা পড়েছেন।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, ‘আবহাওয়া অধিদপ্তর ৩ নম্বর সতর্কসংকেত জারি করায় বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সেন্টমার্টিনগামী জাহাজ, স্পিডবোট, কাঠের বোট বা যেকোনো জলযান চলাচল পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সেন্টমার্টিন দ্বীপে অবস্থানরত সব পর্যটককে নিরাপদে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান আজাদীকে বলেন, ‘নিম্নচাপটি নিয়ে সতর্ক রয়েছে জেলা প্রশাসন। এখনো ৩ নং সতর্ক সংকেত বহাল রয়েছে। সতর্ক সংকেত চারে পৌঁছলে দুযোর্গ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা আহ্বান করে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’