গ্রেফতারকৃত তাসিউর রহমান শিশির (ছবি: বাংলাবার্তা)
অনলাইনে গেমসের কমিউনিটিতে খুঁজে খুঁজে স্কুল কলেজে পড়ুয়া কিশোরী মেয়েদের টার্গেট করতেন দেশের একটি বেসরকারি বিশ্বাবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাসিউর রহমান শিশির। ফাঁদ পাততেন অনলাইনে পাবজি ও ফ্রি ফায়ার গেলার গ্রুপগুলোতে। এরপর গেম খেলার দলে ভিড়িয়ে শুরু করতেন নিজের আসল উদ্দেশ্যে হাছিলের মিশন।
শিশিরের পাতানো ফাঁদে পা দেওয়া অল্প বয়সী কিশোরীদের নিয়ে গেমের দল গঠন করে শুরু করতেন প্রেম। এরপর মোবাইল নম্বর ও হোয়াটসঅ্যাপসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আইডি নিয়ে নিয়মিত কথা বলতেন। পরবর্তীতে যা গড়ায় প্রেমের সম্পর্কে। এরপর গোপনে প্রেমিকার সঙ্গে আপত্তিকর মুহুর্তের ভিডিও ও ছবি তুলে রাখতেন শিশির। আর এগুলোকে হাতিয়ার বানিয়ে আরও আপত্তিকর ছবি-ভিডিও ও টাকা পয়সা আদায় করতেন।
গত এক বছরে অন্তত ২০ কিশোরী শিশিরে ফাঁদে পড়ে সর্বস্ব হারিয়েছেন। তবে শেষ রক্ষা হয়নি তার। এক ভুক্তভোগীর বোনের অভিযোগেরে প্রেক্ষিতে তাকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার এন্ড স্পেশাল ক্রাইমের (দক্ষিণ) বিভাগ।
সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) গাজীপুরের জয়দেবপুর থানার মোল্লাপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় একটি মোবাইল ও দুটি সিমকার্ড উদ্ধার করা হয়।
মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
অতিরিক্ত কমিশনার হারুন বলেন, অনলাইনে বেশ কিছু গেমস খেলার জন্য পার্টনার প্রয়োজন হয়। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে গ্রেফতার শিশির গত কয়েক বছর ধরে উঠতি বয়সী কিশোরীদের সংগ্রহ করে গ্রুপে গেমস খেলতো। গেইম খেলার সময় তার পার্টনার হয়ে খেলার সুযোগে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করত। এরপর কৌশলে মোবাইল নম্বর, হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর, ইনস্টাগ্রাম ও ফেসবুক আইডি নিয়ে বন্ধুত্ব তৈরি করতো। এরপর বিভিন্ন ধরণের প্রলোভন দেখিয়ে ভিডিও কলে কথা বলত।
এক সময় এই মেয়েদের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে নগ্ন ছবি ও পর্ণ ভিডিও পাঠিয়ে অনৈতিককাজে প্রলুব্ধ করত। এরপর সেই সময়ের দৃশ্য স্ক্রীন রেকর্ডারের মাধ্যমে রেকর্ড করত। পরবর্তীতে সেই ভিডিও প্রকাশের ভয় দেখিয়ে আরও একান্ত ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও করতে বাধ্য করত। এমন কি এই ভিডিওকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে টাকা এবং শারীরিক সম্পর্ক করতে বাধ্য করত। কেউ অবৈধ সম্পর্কে না জড়াতে চাইলে অথবা দাবিকৃত টাকা না দিতে চাইলে ভুক্তভোগীদের আত্মীয়-স্বজনদের কাছে ভিডিও পাঠানোর পাশাপাশি অনলাইনে ছেড়ে দিত।
সম্প্রতি এক ভুক্তভোগীর সঙ্গে একই ঘটনা ঘটে। বিষয়টি তার বড় বোনকে জানাল তিনি একটি অভিযোগ দায়ের করেন। এরই প্রেক্ষিতে গাজীপুরের জয়দেবপুরে অভিযান চালিয়ে শিশিরকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগ।
বাংলাবার্তা/এসএ