ছবি: বাংলাবার্তা
তৈমুর আলম খন্দকার। বিএনপির চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা। নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির রাজনীতিতে সাবেক প্রভাবশালী নেতা। দুইবার নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। প্রথমবার ২০১১ সালে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে। দ্বিতীয়বার ২০২২ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে। যদিও ২০১১ সালে ভোগগ্রহণ শুরুর মাত্র সাত ঘণ্টা আগে রাত ১টার দিকে তৈমুর আলম খন্দকারের মতামতের তোয়াক্কা না করে তার দল বিএনপি ভোট বর্জন করে। সেনাবাহিনী মোতায়েন না করা, কালো টাকা ছড়ানো এবং ভোটারদের ভয়-ভীতি দেখানোর অভিযোগ তুলে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ায় বিএনপি।
এরপর ২০১৬ সালের নাসিক নির্বাচনে তৈমুর আলমকে বাদ দিয়ে সাখাওয়াত হোসেন খানকে প্রার্থী করে বিএনপি। ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে কর্মী সমর্থকদের নিয়ে গুলশান কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন তৈমুর আলম খন্দকার। ২০২২ সালে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী হন তিনি। নির্বাচনে দাঁড়ানোর ‘অপরাধে’ বিএনপি তাকে বহিষ্কার করলেও ‘দলহীন’ তৈমুর ৯২ হাজার ১৬৬ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন।
বিএনপি থেকে বহিষ্কারের শিকার হয়ে দলে ফেরার জন্য ২০ মাস অপেক্ষায় থাকার পর চলতি বছর ১৯ সেপ্টেম্বর তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দিয়ে দলটির মহাসচিবের দায়িত্ব নেন তৈমুর আলম খন্দকার। ঘোষণা দেন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের। অতঃপর তৃণমূল বিএনপির দলীয় প্রতীক সোনালী আঁশ নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে লড়ছেন তৈমুর আলম খন্দকার। তার প্রধান প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী গোলাম দস্তগীর গাজী।
সম্প্রতি বাংলাবার্তাকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে নিজের প্রধান প্রতিপক্ষ সম্পর্কে মূল্যায়ন, ভোটের মাঠ নিয়ে স্বস্তি অস্বস্তির বিষয়ে খোলা-মেলা আলাপ করেন তৈমুর আলম খন্দকার। তার সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বাংলাবার্তার সিনিয়র রিপোর্টার শান্ত খান। সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ নিচে তুলে ধরা হল।
বাংলাবার্তা: অনেকেই মনে করেছিল আপনারা সরকারের আনুকূল্য নিয়ে নির্বাচনে যাচ্ছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখা গেল আপনাদের সঙ্গে আসন সমঝোতা হলো না আওয়ামী লীগের। বিষয়টা কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
তৈমুর আলম খন্দকার: ‘অনেকের মনে করা’ নিয়ে তো আমরা রাজনীতি করি না। আমরা আমাদের রাজনীতি করি। সরকার বা আওয়ামী লীগের আনুকূল্যের কথা আমরা কখনও চিন্তা করিনি। এ বিষয়ে সরকারের সঙ্গে আমাদের কোনো আলোচনাও হয়নি। আমরা শুধু চেয়েছি নির্বাচনটা যেন অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হয়। সরকার এ ব্যাপারে আমাদের আশ্বস্ত করেছে।
বাংলাবার্তা: শুরু থেকেই আপনারা বলে আসছিলেন সংসদের প্রধান বিরোধী দল হওয়ার লক্ষ্যে আপনারা নির্বাচনে যাচ্ছেন। এই লক্ষ্য অর্জনে আপনারা কি প্রস্তুত?
তৈমুর আলম খন্দকার: আমরা যেহেতু আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন ভাগাবাগি করি নাই, সেহেতু নৈতিক দিক থেকে সংসদের প্রধান বিরোধ দল হওয়ার প্রকৃত দাবিদার আমরাই। সত্যিকার অর্থে বিরোধীদল হওয়ার জন্য যে নৈতিক ভিত্তি দরকার, সেটা কেবল আমাদের আছে। তাছাড়া আমরা তৃতীয় সর্বাধিক আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে ৩০/৪০ আসনে অনায়াসে জিতে আসতে পারব। বর্তমান বাস্তবতায় প্রধান বিরোধী দল হওয়ার জন্য এটা যথেষ্ট।
বাংলাবার্তা: সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলছিলেন। এখন পর্যন্ত যে পরিবেশ-পরিস্থিতি বিরাজ করছে, সেটা কি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যথেষ্ট মনে করেন?
তৈুমুর আলম খন্দকার: অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য পরিবেশ খুব ভালো আছে, সেটা বলা যাবে না। বিভিন্ন জায়গায় তাদের (আওয়ামী লীগ) দুই গ্রুপের মধ্যে হানাহানির খবর শোনা যাচ্ছে। এটা বন্ধ করতে হবে। এটা আরও বাড়লে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।
বাংলাবার্তা: আপনারা বলেছিলেন ৩০০ আসনে প্রার্থী দেবেন। কিন্তু প্রার্থী দিলেন ২৩০ আসনে। সেখান থেকে টিকল মাত্র ১৩৩ জন। সব আসনে প্রার্থী দিতে পারলেন না কেন?
তৈমুর আলম খন্দকার: আমাদের দলটা অপেক্ষকৃত নতুন। তারপরও ৩০০ আসনের জন্যই আগ্রহী প্রার্থী ছিল। তার মধ্য থেকে যাচাই-বাছাই করে আমরা ২৩০ আসনে প্রার্থী দিয়েছিলাম। নির্বাচন কমিশনের বাছাই শেষে টিকেছিল ১৩৩ জন। নির্বাচন কমিশন এবং উচ্চ আদালতে আপিলের পর আমরা আরও প্রায় ২০ জনের প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছি। এখন আমাদের প্রার্থী সংখ্যা ১৫২ জন। প্রার্থী দেওয়ার সময় সক্ষমতা, সততা, গ্রহণযোগ্যতা, জনপ্রিতা, পরিচিতি, রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার বিষয়টি মাথায় রেখেছি। দেখে-শুনে যোগ্যদেরই প্রার্থী করেছি। এ কারণেই ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়া সম্ভব হয়নি।
বাংলাবার্তা: ভোটের মাঠে বিএনপি না থাকায় বাড়তি সুবিধা পাবেন কিনা?
তৈমুর আলম খন্দকার: এসব প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সমীচীন মনে করি না। যারা যার রাজনীতি সেই সেই করবে। তারা (বিএনপি) যেহেতু ভোটে আসেনি, সেহেতু তাদের প্রসঙ্গটা এখানে প্রাসঙ্গিক নয়।
বাংলাবার্তা: আপনি তো বিএনপির সাবেক নেতা। নির্বাচনের মাঠে বিএনপির নেতাকর্মীদের সমর্থন সহযোগিতা পাচ্ছেন কি?
তৈমুর আলম খন্দকার: এ বিষয়ে কিছু বলতে চাই না। যারা তৈমুর আলমকে ভালোবাসে, তৈমুর আলমের রাজনীতিকে পছন্দ করে, তারা অবশ্যই কাজ করছে।
বাংলাবার্তা: আপনার আপন ভাই কি আপনার সঙ্গে আছে?
তৈমুর আলম খন্দকার: সে তার রাজনীতি করছে। আমি আমার রাজনীতি করছি। রাজনীতির মাঠে সবসময় সব হিসাব মেলাতে নেই।
বাংলাবার্তা: আপনার প্রধান প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী গোলাম দস্তগীর গাজী। তিন বারের সংসদ সদস্য তিনি। বর্তমানে তিনি একজন সিনিয়র মন্ত্রী। বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?
তৈমুর আলম খন্দকার: গোলাম দস্তগীর গাজীকে আমি বড় প্রতিপক্ষ মনে করি না। আবার ছোটও মনে করি না। আমি আমার নিজের ওপর আস্থা রাখি। আমি তো চুরি-ডাকাতি, জমি দখল, ভূমি দখল করি নাই। কারও হক মেরে খাই নাই। এলাকার মানুষ আমাকে চেনে, আমাকে জানে। মানুষ আমাকে ভালোবেসে ভোট দেবে। নির্বাচিত হলে আমি মানুষের সেই ভালোবাসার প্রতিদান দেব।
বাংলাবার্তা: আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা হয়নি আবার বিএনপি ছেড়ে আসার কারণে বিএনপির ভোটও পাবেন না। এমন পরিস্থিতিতে জয়ের ব্যাপারে আপনি কতটা আশাবাদী?
তৈমুর আলম খন্দকার: আমি দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করি। আমার রাজনীতি সাধারণ মানুষের জন্য। মানুষের মঙ্গলের জন্য। এখানে আওয়ামী লীগ-বিএনপির সর্থকরাও আমাকে ভোট দেবে। কারণ, আমি কোনো দিন কারও ক্ষতি বা অমঙ্গল করি নাই। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমি জিতে আসব।
বাংলাবার্তা: নির্বাচনী প্রচারে কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
তৈমুর আলম খন্দকার: আমি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুইবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছি। প্রথমবার দলীয় সিদ্ধান্তে ভোট বর্জন করতে হয়েছে। দ্বিতীয়বার প্রার্থী হওয়ার কারণে দল আমাকে বহিষ্কার করেছে। তারপরও ৯২ হাজার ১৬৬ ভোট পেয়েছি। এ থেকে প্রমাণ হয়, সাধারণ ভোটার এবং এলাকার জনগণ আমার সঙ্গে ছিল। এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ভোটাররা আমার সঙ্গে আছে। আমার নির্বাচনী প্রচারে প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক লোক হাজির হচ্ছে।
বাংলাবার্তা: এখন পর্যন্ত বড় ধরনের কোনো বাধার সম্মুখীন হয়েছেন কি?
তৈমুর আলম খন্দকার: এখন পর্যন্ত বড় ধরনের কোনো বাধার সম্মুখীন হইনি। আইন-শৃঙ্খলা প্রয়োগকারী সংস্থা তাদের নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করলে আশা করি বড় ধরনের কোনো সমস্যা হবে না।
বাংলাবার্তা: আপনাকে ধন্যবাদ।
তৈমুর আলম খন্দার: আপনাকেও ধন্যবাদ।
বাংলাবার্তা/এসএ