মিয়ানমারের ছোড়া মর্টার শেল (ছবি: বাংলাবার্তা)
বান্দরবানে নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমে মিয়ানমার জান্তা বাহিনীর ছোঁড়া মর্টার শেল এসে পড়ল ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে একটি বাড়ির আঙ্গিনায়।
মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) ভোরে ঘুমধুম ইউপির ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যম পাড়ায় সৈয়দ নূরের বাড়ির সামনে এসে মর্টার শেলটি পড়ে। তবে এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
এছাড়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘুমধুম তুমব্রু সীমান্তের পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে আশঙ্কায় সীমান্ত এলাকার লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ঘুমধুম ইউনিয়নের ১ নম্বর উত্তর ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে আশ্রয় শিবির ঘোষণা করা হয়েছে।
সূত্রে জানা যায়, ঘুমধুম তুমব্রু সীমান্ত, থাইংখালি সীমান্ত ও টেকনাফের হোয়াইক্যং দিয়ে মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির লাগাতার হামলায় টিকতে না পেরে এ পর্যন্ত পালিয়ে এসেছে ২৬৪ জান্তা সীমান্তরক্ষী সামরিক বাহিনীর সদস্য। এসব সদস্যরা দফায় দফায় বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে। পরে তাদেরকে বিজিবির হেফাজতে নেওয়া হয়। এরমধ্যে বিজিপি সেনাসহ মিয়ানমার সরকারের অন্যান্য বাহিনী সদস্যও রয়েছে এবং তাদের মধ্যে কয়েকজন রক্তাক্ত অবস্থায় বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। এদের নিরস্ত্র করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়েছে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি)।
বিজিবি সূত্রে জানা গেছ, মিয়ানমারে সংঘাতের জেরে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সীমান্ত এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এখন পর্যন্ত দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ২৬৪ জন সদস্য অস্ত্রসহ বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। বাংলাদেশের বিজিবি তাদের নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়েছে। একই সাথে আহত ১৫ জন বিজিপি সদস্যকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এছাড়া কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে ৯ জনকে। এরমধ্যে তিনজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তাদেরকে বিজিবির নিরাপত্তার মাধ্যমে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে নিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
এদিকে, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের অংশে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের আশায় প্রায় ৪০০ চাকমা সম্প্রদায়ের মানুষ অপেক্ষায় রয়েছে। তবে কক্সবাজার বিজিবির রিজিয়ন কমান্ডার সাফ জানিয়ে দিয়েছেন আর কোনো মিয়ানমারের নাগরিককে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকতে দেওয়া হবে না। এছাড়া এক রোহিঙ্গা পরিবারকেও ফিরিয়ে দিয়েছে বিজিবি।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে মিয়ানমারের আরও শতাধিক সীমান্তরক্ষী
অন্যদিকে, গত সোমবার বিকালে টেকনাফের হোয়াইক্যং উলুবনিয়া পয়েন্টে রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেন। পরে তাদের পুশব্যাক করে বিজিবি। অনুপ্রবেশের চেষ্টাকারী মিয়ানমারের নাগরিকরা হলেন, মংডু জেলার ভৌগনী গ্রামের হোসেন আলীর ছেলে মো. রহমত উল্লাহ (৩০), তার স্ত্রী সাজেদা বেগম (২৫), ছেলে হায়াতুন নূর (৫), জোনাইদ (৩) ও মেয়ে আমাতনুর (দেড় বছর)।
ঘুমধুম ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. আনোয়ার হোসেন জানান, সোমবার বিকাল থেকেই ইউনিয়নের বাইশপারি তঞ্চঙ্গ্যা পাড়া থেকে ২০ পরিবার, ভাজাবনিয়া তঞ্চঙ্গ্যা পাড়া থেকে ৩০ পরিবার, তুমব্রু কোনার পাড়া থেকে ৩০ পরিবার, ঘুমধুম পূর্ব পাড়া থেকে ২০ পরিবার, তুমব্রু হিন্দু পাড়া থেকে ১০ পরিবার নিরাপদ আশ্রয়ে কক্সবাজার উখিয়ার বিভিন্ন এলাকার আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে।
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ.কে.এম জাহাঙ্গীর আজিজ জানান, আজকে টানা ৬ দিন ধরে সীমান্তে মিয়ানমারের ওপারে গোলাগুলির কারণে আতঙ্কে আছে এলাকাবাসী। গত রাতব্যাপী সীমান্তের ওপারে গোলাগুলির আওয়াজ শোনা গেছে। সীমান্ত পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে এ আশঙ্কায় ঘুমধুম ইউনিয়নের ৭ নাম্বার ওয়ার্ডের ১ নম্বর উত্তর ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জনগণের জন্য আশ্রয় শিবির হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। সীমান্ত ঘেষা লোকজনকে সেখানে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
বান্দরবানের পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন বলেন, সোমবার ঘুমধুম এলাকায় মর্টার শেল বিস্ফেরণে নিহতের ঘটনায় নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং তদন্ত চলমান রয়েছে। এছাড়া সর্বশেষ তথ্য পাওয়া পর্যন্ত মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশের বিজিবির কাছে আশ্রয় নিয়েছে ২৬৪ জন। এরমধ্যে মিয়ানমার বর্ডার গার্ড বিজিপি ও সামরিক সদস্য রয়েছে।
আরও পড়ুন: প্রাণ বাঁচাতে বিজিবি ক্যাম্পে আশ্রয় নিল মায়ানমারের পুলিশ
কক্সবাজার বিজিবির রিজিয়ন কমান্ডার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মোরশেদ আলম জানান, মিয়ানমার জান্তা বাহিনীর মর্টারশেল বাংলাদেশের ভুখন্ডের বসতবাড়িতে বিস্ফোরণে দুইজন নিহতের ঘটনায় বিজিবির পক্ষ থেকে মিয়ানমারকে কড়া প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া জান্তা সরকারের সীমান্ত রক্ষীদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্যায়ে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান তিনি।
বাংলাবার্তা/এসএ