তুমব্রু সীমান্ত। ছবি : সংগৃহীত
নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম তুমব্রু সীমান্ত এলাকায় গত দু‘দিন ধরে ওপার থেকে গোলাগুলির শব্দ না আসায় পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। তবে পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও অজানা আতঙ্কে রয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
কিছু পরিবার বাড়ি ফিরলেও ঘরবাড়ি ছেড়ে বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নেওয়া অনেক পরিবার এখনও বাড়ি ফিরে আসেনি।
এছাড়া ঘুমধুম সীমান্ত ঘেঁষা গ্রাম গুলোতে চোরের উপদ্রব বেড়ে গেছে। পাশাপাশি কারবারিরাও সক্রিয় হয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়াও সীমান্তের ধানক্ষেত গুলোতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে মিয়ানমারের ছোঁড়া অবিস্ফোরিত বোমা, গ্রেনেট, মর্টারশেল আতঙ্কে রয়েছে স্থানীয় কৃষকরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সেনা ও বিদ্রোহীদের চলমান যুদ্ধ বান্দরবানের ঘুমধুম-তুমব্রু থেকে সরে পার্শ্ববর্তী টেকনাফ হোয়াইক্ষং, উনছিপ্রাং, কানজড়পাড়া, খারাংখালী ঝিমনখালী এলাকার সীমান্তের দক্ষিণ দিকে অগ্রসর হচ্ছে। বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরকান আর্মি মিয়ানমারের ওপারে শীলখালী, বলিবাজার ও কুইরখালী জান্তা সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ঘাটিগুলো দখলে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড বিজিবি ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সীমান্তে কঠোরভাবে অবস্থান না নিলে মিয়ানমার সীমান্তের ওপারে থেকে সুযোগ পেলেই রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশ করতে পারে বলে ধারণা করছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধিরা।
স্থানীয় বাসিন্ধাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টা থেকে শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) ভোর ৫টা পর্যন্ত কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার সীমান্তের কাছাকাছি এলাকা গোলাগুলি মর্টার শেল বিস্ফোরণের বিকট শব্দে কেঁপে উঠেছে। বান্দরবানের ঘুমধুম তুমব্রু সীমান্তবর্তী এলাকা গুলোতে পরিস্থিতি শান্ত হওয়ায় এলাকা বাসীদের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরে এসেছে। তবে সীমান্ত ঘেঁষা গ্রামবাসীরা অজানা আতঙ্কে দিন পার করছে। আতঙ্কে বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নেওয়া অনেকগুলো পরিবার গ্রামে ফিরে না আসার কারণে পাড়া মহল্লা ফাঁকা থাকায় গ্রামগুলোতে মাদক কারবারি ও চোরের উপদ্রব বেড়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা।
ঘুমধুমের স্থানীয় কৃষক নুরুল ইসলাম জানান, নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম তুমব্রু সীমান্ত এলাকা গত দুদিন ধরে ওপার থেকে গোলা গুলির শব্দ কমলেও আতঙ্কের কারণে তারা সীমান্তবর্তী জমিগুলোতে চাষাবাদের কাজ করতে পারছেন না। তাদের রোপনকৃত ধান ক্ষেতে মিয়ানমারের ছোঁড়া অবিস্ফোরিত বোমা, গ্রেনেট, মর্টারশেল পড়ে থাকার আশঙ্কা নিয়ে আতঙ্কে জমিতে নামতে ভয় পাচ্ছে। এছাড়া অনেক কৃষক ঝুকি নিয়ে কৃষি জমিতে কাজ করছেন বলেও জানান তিনি।
ঘুমধুম ইউপি চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, গত এতদিন ধরে ঘুমধুম সীমান্ত এলাকা অনেকটা স্বাভাবিক আছে। গোলাগুলির আর তেমন কোনো শব্দ শোনা যায়নি। গত কিছুদিন ধরে সীমান্তের ওপারে গোলাগুলির কারণে আতঙ্কে ছিলেন এলাকাবাসী। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় আশ্রয়কেন্দ্র ও আত্মীয়দের বাড়িতে চলে যাওয়া বাসিন্দারা আবার এলাকায় ফিরতে শুরু করেছেন। তবে স্থানীয়রা কিছুটা আতঙ্কে রয়েছে বলে জানান তিনি।
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, ঘুমধুম সীমান্তের পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। কিছুটা আতঙ্ক থাকলেও স্থানীয়রা বাড়ি ফিরছেন। আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হবে এসএসসি পরীক্ষা। আর এই পরীক্ষায় নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকার ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ে ৫৫০ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করবে। পরীক্ষা চলাকালীন যদি সীমান্তে আবারও উত্তেজনা বাড়ে, তবে কেন্দ্রটি পরিবর্তন করে ১ নম্বর উত্তর ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ২ নম্বর উত্তর ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্থাানান্তর করা হবে বলে। এছাড়া সীমান্তের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিজিবির টহল আরও জোরদার করা হয়েছে বলে জানান।
উল্লেখ্য, এবছরের জানুয়ারি মাসের শুরু থেকে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘর্ষের মিয়ানমার সরকারি বাহিনী বিদ্রোহীদের সঙ্গে যুদ্ধে টিকে থাকতে না পেরে বাংলাদেশে অভ্যন্তরে আশ্রয়ের খোঁজে পালিয়ে আসে দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি, মিয়ানমার সেনাবাহিনী, পুলিশ, ইমিগ্রেশন সদস্য ও অন্যান্য সংস্থার ৩৩০ জন সদস্য। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) তাদের সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণ করে নিরাপদ আশ্রয় দিয়েছে এবং আহতদের চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী তাদের মায়ানমারে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।
বাংলাবার্তা/এআর