সংগৃহীত ছবি
পাবনায় দিন-দুপুরে বাসাবাড়িতে ডাকাতির অভিযোগে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসহ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেলের ধারাবাহিক অনুষ্ঠান ক্রাইম পেট্রোল দেখে তারা ডাকাতির কৌশল রপ্ত করে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তার হওয়ারা সবাই মেধাবী। এদের কেউ পড়ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে, কেউ কলেজে, আবার কেউবা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কিন্তু অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, এসব মেধাবী শিক্ষার্থীরাই টিভি সিরিয়াল ক্রাইম পেট্রোল দেখে অভিনব কায়দায় ডাকাতি বা ছিনতাইয়ের মত অপরাধে নেমেছেন।
সম্প্রতি এই শিক্ষিত যুবকদের একটি চক্র পাবনা শহরে প্রকাশ্য দিনের বেলায় দু’টি বাড়িতে অভিনব কায়দায় ডাকাতির পরিকল্পনা করে। এরমধ্যে এক বাড়িতে দিনের বেলায় ডাকাতি করে নগদ টাকা ও সোনার গহনা নিয়ে যায় তারা। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের এমন অপরাধ চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর সাংবাদিকদের সামনে হাজির করে পাবনা পুলিশ।
গ্রেপ্তার তিন শিক্ষার্থী হলো- পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) অর্থনীতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী লিখন হাসান (২৪), পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের ইংরেজি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আব্দুল্লাহিল বাকী অনিক (২২) এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য ফোকাস কোচিং-এ অধ্যয়নরত পাবনা সদর উপজেলার মো. আবুল বাশার (২১)।
পাবিপ্রবি প্রশাসন জানিয়েছে, গ্রেপ্তার শিক্ষার্থী লিখন হাসানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম বলেন, গ্রেপ্তার তিন যুবক ভালো বংশের ছেলে। এদের কারও বাবা-মা শিক্ষক এবং কারও বাবা-মা ব্যবসা করেন। পরিবারের সবাই শিক্ষিত। এরাও কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী। কিন্তু শুধুমাত্র টিভিতে ক্রাইম পেট্রোল বা এ ধরনের শো দেখেই তাদের নৈতিক অবক্ষয় হয়। তারা অভিনব কায়দায় এইসব অপরাধ করার কৌশল রপ্ত করেন। এরা সবাই অত্যন্ত বুদ্ধিমান ও আইটি বিষয়ে অভিজ্ঞ। এ বছরে তারা কয়েকটি বাসা বাড়িতে মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ বা কোচিং টিচারসহ নানা ভদ্র পরিচয়ে অভিনব কায়দায় ডাকাতির পরিকল্পনা করে।
এরমধ্যে গত ১০ জানুয়ারি মেডিকেল রিপ্রেজেন্টটিভ পরিচয় দিয়ে পাবনার মধ্য শহরের একটি বাসায় ঢুকার চেষ্টা করে তারা। এসময় বাড়ির লোকজনের সন্দেহ হলে যুবকদের ভিডিও ধারণ করতে যান। এ অবস্থায় ওই বাড়ি থেকে দৌড়ে পালিয়ে যায় চক্রের সদস্যরা। পরদিন ১১ জানুয়ারি দুপুরে পাবনা শহরের জুবিলী ট্যাঙ্কপাড়ার বড় বাজার এলাকায় এক বাড়িতে কোচিং সেন্টারের শিক্ষক পরিচয় দিয়ে বাসায় প্রবেশ করেন। এরপর তারা ওই বাড়ির গৃহবধুর হাত-পা বেঁধে ৭২ হাজার টাকা ও চার ভরি স্বর্ণালংকার নিয়ে পালিয়ে যায়।
এমন ঘটনায় ডাকাতির রহস্য উৎঘাটনে মাঠে নামে পুলিশ। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, তথ্যপ্রযুক্তি ও সিসিটিভির ফুটেজ পর্যালোচনা করে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর তারা প্রাথমিক জ্ঞিাসাবাদে অপরাধ স্বীকার করেছে। পরে তাদের কাছ থেকে ডাকাতির নগদ ৩১ হাজার টাকা, ৪ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও আসামিদের ব্যবহৃত চারটি মোবাইলফোন উদ্ধার করা হয়।
পাবিপ্রবি’র প্রক্টর কামাল হোসেন বলেন, গ্রেপ্তার তিনজনের মধ্যে লিখন তাদের শিক্ষার্থী। তবে সে ক্যাম্পাসে নয়, বাইরে থাকে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।