
সংগৃহীত
সারা দেশের মানুষ আশায় ছিল, অবশেষে জীবনযুদ্ধে জয়ী হবে ৮ বছরের সেই অবুঝ শিশুটি। কিন্তু নির্মম বাস্তবতা তাকে আর ফিরতে দিল না। ধর্ষকের নিষ্ঠুরতার শিকার শিশুটি শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর কাছে হার মানল। তার মৃত্যুতে দেশজুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া, ক্ষোভে ফুঁসছে মানুষ।
জাতীয় নেতাদের শোক ও নিন্দা
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক বিবৃতিতে এই ঘটনাকে ‘সমগ্র জাতির জন্য এক গভীর ক্ষত’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, "এমন পাশবিকতা জাতিকে হতবাক করেছে। প্রশাসনের ব্যর্থতায় অপরাধীরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পাচ্ছে না, ফলে ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে চলেছে।"
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সার্বক্ষণিক শিশুটির চিকিৎসার খোঁজখবর নিয়েছেন এবং তার পরিবারের আইনি সহায়তায় আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ফখরুল।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানও শিশুটির মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে বলেন, “সে ইতিহাসের করুণ সাক্ষী হয়ে আমাদের সামনে রেখে গেল এক কঠিন প্রশ্ন—আমরা কেমন সমাজ গড়েছি?” তিনি ধর্ষকদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করে ৯০ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ শাস্তি কার্যকরের দাবি জানান।
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও মহাসচিব মাওলানা সাজেদুর রহমান এই নৃশংস ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে অপরাধীদের প্রকাশ্যে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম (চরমোনাই পীর) শিশুটির পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে বলেছেন, “এই নির্মম হত্যাকাণ্ড সমাজের জন্য এক চরম লজ্জা।”
জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি এক বিবৃতিতে শিশুটির আত্মার শান্তি কামনা করে নারী ও শিশু নির্যাতনকারীদের দ্রুত বিচারের দাবি জানিয়েছে।
সমাজের সব শ্রেণির প্রতিবাদ ও ক্ষোভ
ধর্ষণবিরোধী মঞ্চ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, “শিশুটির চলে যাওয়া আমাদের সবাইকে দায়ী করে গেছে। এই বর্বরতার ন্যায়বিচার নিশ্চিত না করা পর্যন্ত আমাদের লড়াই চলবে।”
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শোক ও ক্ষোভের ঝড় বইছে। ফেসবুকে ধর্ষকদের দ্রুত বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে অনেকে পোস্ট দিয়েছেন। এনসিপি মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ ও (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম ক্ষোভ প্রকাশ করে দ্রুত বিচারের দাবি জানিয়েছেন।
জনপ্রিয় ব্যান্ড মাইলসের গিটারিস্ট ও গায়ক হামিন আহমেদ কবি কাজী নজরুল ইসলামের একটি লেখা শেয়ার করে প্রতিবাদ জানান—
“পশুর মতো সংখ্যাগরিষ্ঠ হইয়া বাঁচিয়া আমাদের লাভ কী, যদি আমাদের গৌরব করিবার কিছুই না থাকে?”
বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ কর্মসূচি
- মিরপুরে বিক্ষোভ: বেলা সাড়ে ৩টায় মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর থেকে কয়েকশ শিক্ষার্থী ও জনতা ধর্ষকের বিচার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি মিরপুর ২ নম্বর মডেল থানার সামনে গিয়ে শেষ হয়।
- বরিশালে প্রতিবাদ: সন্ধ্যায় নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের সামনে ধর্ষণ-হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে ধর্ষণবিরোধী মঞ্চ বরিশাল।
- কুমিল্লায় মোমবাতি প্রজ্বালন: সন্ধ্যায় পূবালী চত্বরে মোমবাতি জ্বালিয়ে শিশুটির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে ধর্ষণবিরোধী ছাত্র সমাজ। একই সঙ্গে তারা ধর্ষকদের ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করে।
দেশজুড়ে এই প্রতিবাদের ঢেউ আরও বিস্তৃত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জনগণের দাবির মুখে প্রশাসন দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেবে বলে আশা করছেন সবাই।
বাংলাবার্তা/এমএইচ