
ছবি: সংগৃহীত
বিশ্বের ১০০টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানের তালিকা প্রকাশ করে টাইম ম্যাগাজিন। ২০২4 সালের সেই ‘দ্য ওয়ার্ল্ডস গ্রেটেস্ট প্লেসেস’ তালিকায় প্রথমবারের মতো জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশের আশুলিয়ায় অবস্থিত জেবুন নেসা মসজিদ।
গোলাপি রঙের অপূর্ব স্থাপত্য নিয়ে তৈরি এই মসজিদটি শুধু নামাজ আদায়ের স্থান নয়, এটি একইসঙ্গে শিল্প ও পরিবেশের এক অপূর্ব সংমিশ্রণ। ঢাকার উপকণ্ঠে গার্মেন্টস শিল্প অধ্যুষিত অঞ্চলে অবস্থিত এই মসজিদটি মূলত প্রয়াত মায়ের নামে প্রতিষ্ঠিত করেছেন এক শিল্পপতি। তার মালিকানাধীন ফ্যাশন ফোরাম লিমিটেড গার্মেন্টস কারখানার অভ্যন্তরে অবস্থিত এই মসজিদ ৬৫০০ পোশাক শ্রমিকের জন্য একটি প্রশান্তির আশ্রয়স্থল।
মসজিদের স্থাপত্য ও নির্মাণশৈলী
জেবুন নেসা মসজিদের নকশা করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) স্থাপত্যবিদ্যার সাবেক শিক্ষার্থী ও স্টুডিও মরফোজেনেসিসের পরিচালক সাইকা ইকবাল মেঘনা। তার নকশায় মসজিদটি ইসলামিক স্থাপত্য ও পরিবেশবান্ধব ডিজাইনের এক অনন্য সংমিশ্রণ হয়ে উঠেছে।
চতুর্ভুজ নকশা ও অনন্য গম্বুজ
মসজিদটি চতুর্ভুজ আকৃতির যার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে একটি বৃহদায়তন গম্বুজ। স্থাপত্যশৈলীতে ব্যবহৃত হয়েছে গোলাপি রঙের ইট যা এর সৌন্দর্যকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। মসজিদের ভেতরের কাঠামোটি গোলাকার, যা ওপরে উঠে গিয়ে বিশালাকার অগভীর গম্বুজের সৃষ্টি করেছে। এই গম্বুজের মধ্যখানে কোনো স্তম্ভ নেই, ফলে ভেতরে প্রশস্ত জায়গা তৈরি হয়েছে যা নামাজ আদায়ের জন্য যথেষ্ট সুবিধাজনক।
স্বাভাবিক বাতাস চলাচলের বিশেষ ব্যবস্থা
জেবুন নেসা মসজিদকে বলা হয় ‘ব্রেদিং প্যাভিলিয়ন’ বা শ্বাস নেওয়ার মতো উন্মুক্ত স্থাপনা। পুরো মসজিদজুড়ে রয়েছে ছিদ্রযুক্ত দেয়াল, যা দিয়ে আলোর সঙ্গে বাতাসও চলাচল করতে পারে। ফলে মসজিদে বৈদ্যুতিক পাখা বা এসির প্রয়োজন হয় না।
এছাড়াও মসজিদের সামনের স্বচ্ছ জলাধার ও বড় প্রাকৃতিক পুকুর থেকে প্রবাহিত বাতাস প্রাকৃতিকভাবে শীতল হয়ে ভেতরে প্রবেশ করে, যা ভেতরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
নারীদের নামাজের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা
মসজিদের পূর্বপাশে একটি ইস্পাতের সিঁড়ি রয়েছে, যা ওপরে উঠে গিয়ে অর্ধচাঁদের আকৃতির ফ্লোরে সংযুক্ত হয়েছে। এটিকে বলা হয় মেজ্জানাইন ফ্লোর, যা নারীদের নামাজের জন্য সংরক্ষিত। এখান থেকে সরাসরি নিচের মুসল্লিদের নামাজ আদায়ের দৃশ্য দেখা যায়।
শিল্প ও আধ্যাত্মিকতার সম্মিলন
টাইম ম্যাগাজিনের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, “বাংলাদেশের স্থপতিরা অত্যাধুনিক মসজিদ ডিজাইনে পারদর্শী, তবে জেবুন নেসা মসজিদ শিল্প ও পরিবেশের অসাধারণ এক প্রতিচিত্র।”
এই মসজিদটি শুধু মুসল্লিদের জন্য নামাজের স্থান নয়, এটি একটি স্থাপত্যশিল্পের উৎকৃষ্ট উদাহরণ। এর মনোমুগ্ধকর পরিবেশ প্রতিদিন শত শত শ্রমিক ও পথচারীকে প্রশান্তি দেয়।
ধর্মীয় ও সামাজিক গুরুত্ব
মসজিদের ইমাম হাফেজ মুফতি মো. শফিকুল ইসলাম জানান, “সারাদিন কঠোর পরিশ্রমের পর শ্রমিকরা যখন এই মনোরম পরিবেশে নামাজ আদায় করেন, তখন তাদের ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। মালিকপক্ষের এমন উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়।”
মসজিদটি এখন শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও একটি স্থাপত্য ও পরিবেশবান্ধব মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। টাইম ম্যাগাজিনের তালিকায় স্থান পাওয়ার মাধ্যমে এটি আরও বেশি মানুষের নজরে এসেছে, যা বাংলাদেশের স্থাপত্য ও সংস্কৃতির জন্য গর্বের বিষয়।
বাংলাবার্তা/এমএইচ