
ছবি: সংগৃহীত
রমজান শেষের পথে, সামনে ঈদ। এই উৎসবের আবহকে কাজে লাগিয়ে ভোটের মাঠ গোছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। জাতীয় নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, রাজনৈতিক অঙ্গন ততই সরব হয়ে উঠছে। বিশেষ করে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতারা নিজেদের নির্বাচনি এলাকার মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করতে নানা কর্মসূচি হাতে নিচ্ছেন। নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) তারকা প্রার্থীরাও পিছিয়ে নেই। রাজধানী থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত ব্যানার, পোস্টার আর শুভেচ্ছা বার্তায় ছেয়ে গেছে। ঈদ উদযাপন পরিণত হয়েছে ভোটের প্রচারণায়।
বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল জানিয়েছেন, দলটি নির্বাচন সামনে রেখে পূর্ণ প্রস্তুতি নিচ্ছে। অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারও বলেছেন, তারা জনগণের সঙ্গে সংযোগ বৃদ্ধির অংশ হিসেবে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। এনসিপির যুগ্ম-সদস্য সচিব মুশফিক উস সালেহীন জানিয়েছেন, মাত্র এক মাস আগে আত্মপ্রকাশ করলেও তাদের দল ইতোমধ্যেই গণসংযোগ বাড়িয়েছে এবং ঈদের পর আরও সক্রিয় হবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, চলতি বছরের ডিসেম্বরেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জাতীয় নির্বাচন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসও সম্প্রতি পুলিশের এক বৈঠকে এ সময়সীমার কথা নিশ্চিত করেছেন। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মতো দলগুলো দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ চায়। তারা দীর্ঘমেয়াদি সময়ক্ষেপণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। এনসিপিও নির্বাচনের আগে রাষ্ট্র সংস্কারের ‘জুলাই সনদ’ দাবি করেছে, যা বিচার ও প্রশাসনিক পরিবর্তনের ওপর গুরুত্বারোপ করছে।
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সম্ভাব্য প্রার্থীরা গণসংযোগ চালাচ্ছেন। মোহাম্মদপুর, আদাবর ও শেরেবাংলা নগর নিয়ে গঠিত ঢাকা-১৩ আসনে বিএনপির অ্যাডভোকেট আব্দুস সালামের পোস্টার ছড়িয়ে পড়েছে। বরিশালে সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ভোলায় হায়দার আলী লেলিন, পটুয়াখালীতে এবিএম মোশাররফসহ বিভিন্ন জেলার প্রার্থীরাও সক্রিয়। ইসলামী দলগুলোর প্রার্থীরাও গণসংযোগ বাড়িয়েছেন।
বিশ্লেষক মাসুদ কামাল মনে করেন, এবারের নির্বাচনে নতুন ভোটাররা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন। বিগত কয়েকটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারা তরুণরা এবার ভোট দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। বিশেষ করে শিক্ষিত ও সচেতন ভোটাররা শুধু দলীয় প্রতীক দেখে ভোট দেবেন না, তারা দক্ষ ও যোগ্য প্রার্থীকে বেছে নেবেন। ফলে দলগুলোকে প্রার্থী নির্বাচনে সতর্ক হতে হবে।
বিশ্লেষকদের মতে, আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতে এবারের নির্বাচন মূলত বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে। তবে নবগঠিত এনসিপির তারকা প্রার্থীরাও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসতে পারেন। এছাড়া, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও অন্যান্য ইসলামি দলগুলোর প্রভাব রয়েছে দেশের বেশ কয়েকটি আসনে। ফলে ভোটের লড়াই হতে পারে বহুমুখী।
এবারের নির্বাচন শুধু দলীয় রাজনীতির ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে না, বরং নতুন প্রজন্মের ভোটারদের মনোভাবও স্পষ্ট করবে। ফলে রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ