
ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার বাখরনখর এলাকায় এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন চারজন, যাদের মধ্যে রয়েছেন দুইজন নারী ও দুইজন পুরুষ। এছাড়া দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন আরও পাঁচজন, যাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। এই হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনা ঘটে শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) ভোররাত আনুমানিক ২টার দিকে, যখন বেশিরভাগ মানুষ ঘুমিয়ে ছিলেন আর মহাসড়ক ছিল তুলনামূলক ফাঁকা।
স্থানীয় পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা গেছে, একটি পিকআপ ভ্যান যাত্রী এবং গৃহস্থালির আসবাবপত্র বহন করে সিলেট অভিমুখে যাচ্ছিল, অপরদিকে একটি ট্রাক ঢাকা অভিমুখে ছুটছিল। অন্ধকারে ঘন কুয়াশা কিংবা চালকদের অসতর্কতা—এর কোনো একটি কারণেই হয়তো ঘটে যায় ভয়াবহ সংঘর্ষটি, যেখানে দুটি গাড়ি মুখোমুখি প্রচণ্ড গতিতে ধাক্কা খায়। সংঘর্ষটি এতটাই ভয়ংকর ছিল যে, পিকআপটি দুমড়ে-মুচড়ে যায় এবং ঘটনাস্থলেই চারজন যাত্রীর মৃত্যু ঘটে।
মাধবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে হাইওয়ে পুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছান। উদ্ধার অভিযানে স্থানীয়রাও অংশ নেন। নিহতদের মধ্যে দুইজন নারী এবং দুইজন পুরুষ বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে রাতের অন্ধকার, রক্তাক্ত ও বিকৃত দেহের কারণে তাৎক্ষণিকভাবে কারো পরিচয় নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করে হবিগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নিহতদের নাম-পরিচয় শনাক্তে তৎপরতা চলছে এবং এই ব্যাপারে সম্ভাব্য স্বজনদেরও খবর দেওয়া হচ্ছে।
আহতদের মধ্যে বেশিরভাগের শরীরে গুরুতর আঘাত রয়েছে। তাদেরকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। চিকিৎসকরা জানান, আহতদের কয়েকজনের মাথায় ও বুকে আঘাত রয়েছে এবং কয়েকজনের হাড়ভাঙা গুরুতর জখমও হয়েছে। আহতদের মধ্যে একজনের অবস্থা এতটাই সংকটাপন্ন যে তাকে দ্রুত সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
পুলিশের প্রাথমিক তদন্ত অনুযায়ী, পিকআপটিতে অন্তত ১৭ জন যাত্রী ছিলেন। সাধারণত পিকআপ ভ্যান মালামাল পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত হলেও, অনেক সময় অতিরিক্ত যাত্রী বহনের ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়। পিকআপটিতে তোলা হয়েছিল বাসাবাড়ির আসবাবপত্র এবং তার সঙ্গে যাত্রীও তোলা হয়েছিল, যার কারণে গাড়িটির ভারসাম্যহীনতা ঘটতে পারে বলে ধারণা করছে পুলিশ।
ওসি আরও জানান, দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ট্রাক ও পিকআপ ভ্যান বর্তমানে হাইওয়ে পুলিশের হেফাজতে রয়েছে এবং পুরো বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। দুর্ঘটনার কারণ নির্ধারণে প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান সংগ্রহ ও সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করা হবে বলেও জানান তিনি।
সড়ক দুর্ঘটনাটি আবারও দেশের মহাসড়কে যাত্রী ও পরিবহনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। বিশেষ করে মহাসড়কে রাতে ভারী যানবাহনের চলাচল ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আরও কঠোরভাবে তদারকি করার দাবি উঠেছে স্থানীয়দের পক্ষ থেকে।
সড়ক পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বারবার বলে আসছেন, মহাসড়কে অবৈধ যাত্রীবহন, গাড়ির অতিরিক্ত লোডিং, চালকদের ক্লান্তি এবং অপ্রশিক্ষিত চালনা—সব মিলিয়ে সড়কে ঝুঁকি বাড়ছে। এই ধরনের দুর্ঘটনায় শুধুমাত্র প্রাণহানিই নয়, দীর্ঘমেয়াদী শারীরিক ও মানসিক ক্ষতির মুখে পড়েন আহত ব্যক্তিরা এবং তাদের পরিবার।
এদিকে দুর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর বাখরনখর এলাকাসহ আশেপাশের এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। স্থানীয়দের অনেকেই দ্রুত রক্তদানের জন্য হাসপাতালে ছুটে আসেন আহতদের সহায়তায়। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও আহতদের চিকিৎসা সহায়তার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে এবং দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটন ও দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা যেন আরও একটি সতর্কবার্তা হয়ে আসে—অসতর্কতা, নিয়ম ভঙ্গ ও অতিরিক্ত লোভের বলি যেন না হয় আর একটি প্রাণও।
বাংলাবার্তা/এমএইচ