
ছবি: সংগৃহীত
রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার কেশরহাট পৌর এলাকার বিদ্রিকায় অবস্থিত এএমএম নামে অবৈধ ইটভাটায় গত ১৯ এপ্রিল উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় অভিযান চালায় পরিবেশ অধিদপ্তর। নিয়ম না মেনে ইটভাটা পরিচালনা করার অভিযোগে মোহনপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট আয়শা সিদ্দিকা'র ভ্রাম্যমান আদালতে জরিমানা করা হয়েছে দেড় লাখ টাকা। এরপরও এএমএম ভাটা মালিক আমজাদ দিগর প্রভাব খাটিয়ে ভাটা চালানোয় এবার ভাটার আগুনে পুড়ে ধান, পান, পটল ও বেগুনসহ বিভিন্ন ফসলের লাখ লাখ টাকা ক্ষতি সাধন হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিস বিষয়টি জানতে পেরে ২৬ এপ্রিল শনিবার বেলা ২টার দিকে কৃষি অফিসার কামরুল ইসলাম ও অতিরিক্ত কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার আব্দুল মান্নান কৃষকদের সাথে নিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ ফসলের মাঠ পরিদর্শন করেন।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর প্রতিবেদনে জানা গেছে, বিদ্রিকা এলাকার ৭১০৪ হেক্টর ধান এর মধ্যে ৫৮ কৃষকের ১৯ দশমিক ৮ মেট্রিক টন আর্থিক ক্ষতি ৬ লাখ ৯৩ হাজার টাকা, ১৩১৭ হেক্টর পান এর মধ্যে ৭ পানচাষীর দশমিক পঞ্চাশ হেক্টর জমির পান আর্থিক ক্ষতি ২৫ হাজার টাকা, ২০৪ হেক্টর পটল এর মধ্যে ১২ কৃষকের আর্থিক ক্ষতি ২০ হাজার টাকা, ৫১ হেক্টর বেগুন এর মধ্যে ৭ কৃষকের আর্থিক ক্ষতি ১২ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে ফসলের ক্ষতির পরিমান
প্রায় ৭ লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা।
এছাড়াও ভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় ফসলের ক্ষতি ছাড়াও আম, কাঁঠাল, লিচুসহ বিভিন্ন ফলদ গাছের পাতা কুঁকড়ে গেছে। ফল ঝরে পড়েছে। ধোঁয়া বন্ধ হলেও বিষাক্ত রাসায়নিক বিক্রিয়ায় এখনও নতুন ফসলের ক্ষেতসহ গাছপালা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
ভুক্তভোগী কৃষকদের অভিযোগ, বিদ্রিকা এলাকার প্রভাবশালী আমজাদ, হাজি সিরাজ ও গিয়াস উদ্দিন এর মালিকানাধীন এএমএম ইটভাটার কারণে ফসলের খেত পুড়ে গেছে। কৃষকদের দাবি ভাটায় অতিরিক্ত জ্বালানি ব্যবহারের কারণে তৈরি হওয়া বিষাক্ত ধোঁয়ায় ধান খেতসহ অন্যান্য ফসল পুড়ে গেছে।
ভুক্তভোগী কৃষকরা জানান, বুক ভরা আশা নিয়ে তারা এবার জমিতে ধান, পান চাষসহ বিভিন্ন ফসল করেছিলেন। ফলনও বেশ ভালো হয়েছিল। কিন্তু ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় তাদের স্বপ্ন শেষ।
ধানচাষী কৃষক নজরুল, মিরাজ, সবুজ, সেলিম, সুজন, কাওসার, দুলাল বলেন, ‘আমাদের স্বপ্ন ভাটার আগুনে পুড়ে গেছে। এখন আমরা পরিবার নিয়ে সারাবছর কি খাব সে চিন্তায় আছি। আমরা এর প্রতিকার চাই।
পানচাষী জসিম, সিরাজ, আজাহার, রুস্তম বলেন, পানগাছে ছয়ইন্চি গোড়া পঁচা রোগে আমরা এমনিতেই ক্ষতিগ্রস্থ এর উপর খাঁড়া ঘা হিসেবে ইটভাটার আগুনে নষ্ট হল পান বরজ। এক্ষতি কোন ভাবেই পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব না। বসতবাড়ি এলাকায় অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করা জরুরি।
এ ব্যাপারে এএমএম ইটভাটার মালিক পক্ষের গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘ ফায়ারম্যানের ভুলের কারণে ফসলের ক্ষতি হয়েছে। প্রয়োজনের দ্বিগুণ জ্বালানি ব্যবহারের কারণে এঘটনা ঘটেছে। ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আয়শা সিদ্দিকা বলেন, ‘এ ঘটনায় কেউ কোনো লিখিত অভিযোগ করেনি। এবিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের একটি রিপোর্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে পাঠানো হয়েছে। উর্ধতন কর্তৃপক্ষের মতামত পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ