
ছবি: সংগৃহীত
কুমিল্লায় বজ্রপাতের পৃথক দুটি মর্মান্তিক ঘটনায় দুই স্কুলছাত্রসহ চারজনের প্রাণহানি ঘটেছে। এই হৃদয়বিদারক ঘটনাগুলো সোমবার (২৮ এপ্রিল) দুপুরের দিকে জেলার বরুড়া ও মুরাদনগর উপজেলায় ঘটে। বজ্রপাতের আঘাতে আহত আরও একজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বরুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী নাজমুল হক এবং বাঙ্গরা বাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুর রহমান পৃথকভাবে দুর্ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দুপুরের দিকে হঠাৎ করে আকাশে মেঘ জমে। কিছুক্ষণ পরেই শুরু হয় প্রবল গর্জন ও বিদ্যুৎ চমকানো। এ সময় মাঠে, খোলা জায়গায় এবং বাইরে অবস্থানরত কয়েকজন বজ্রপাতের কবলে পড়েন।
বরুড়া উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ দুর্গাপুর গ্রামে ঘটে প্রথম দুর্ঘটনাটি। সেখানে স্কুলফেরত দুই কিশোর বন্ধু বজ্রপাতের আঘাতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারায়। তাদের একজন স্থানীয় উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ছিল, অপরজন নবম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। দুজনেই প্রতিদিনের মতো স্কুল শেষে বাড়ি ফেরার পথে ছিল। হঠাৎ বৃষ্টির দেখা পেয়ে দ্রুত ছুটে যাওয়ার সময় বজ্রপাত তাদের ঝলসে দেয়। ঘটনার আকস্মিকতায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। পরিবারের সদস্যরা ছুটে এসে তাদের নিথর দেহ বাড়িতে নিয়ে যান।
অন্যদিকে, মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা বাজার এলাকায় আরেকটি বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। সেখানেও দুই ব্যক্তি প্রাণ হারান। নিহতদের মধ্যে একজন কৃষক ছিলেন, যিনি বৃষ্টির আগে তার জমির কাজ শেষ করার চেষ্টা করছিলেন। অপরজন স্থানীয় বাজারে ব্যবসায়িক কাজে বাইরে ছিলেন। হঠাৎ বজ্রপাতের আঘাতে তারা ঘটনাস্থলেই মারা যান।
এই দুইটি ঘটনার পর স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানো হয়েছে। বরুড়া উপজেলার চেয়ারম্যান এবং মুরাদনগরের ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা নিহতদের বাড়িতে গিয়ে পরিবারগুলোর পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন।
এদিকে, আহত ব্যক্তিকে প্রথমে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে দ্রুত কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। তার শরীরের বেশ কিছু অংশ ঝলসে গেছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। বর্তমানে তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশে এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত বজ্রপাতের ঘটনা বেড়ে যায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে বজ্রপাতের প্রকোপ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে সচেতনতার অভাব, নিরাপদ আশ্রয়ের অভাব এবং দ্রুত পূর্বাভাস না পাওয়া এসব মৃত্যুর ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে তুলছে।
কুমিল্লার এই মর্মান্তিক ঘটনায় সচেতন মহল ও স্থানীয় প্রশাসন আবারও মাঠ পর্যায়ে বজ্রপাতের সময় করণীয় সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়েছেন। বিশেষ করে শিক্ষার্থী ও কৃষিজীবী মানুষের জন্য প্রাথমিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা বলা হচ্ছে।
এদিকে নিহতদের দাফন-কাফন নিয়ে পরিবারগুলো প্রস্তুতি নিচ্ছে। বরুড়া ও মুরাদনগরের এই দুটি জনপদ এখন শোকাচ্ছন্ন। হারানো প্রাণের জন্য এলাকার মানুষজন কান্নায় ভেঙে পড়েছে। স্থানীয় মসজিদগুলোতে নিহতদের জন্য বিশেষ দোয়ার আয়োজন করা হয়েছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ