
সংগৃহীত
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণের মতো অপরাধের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে কিছু বিধান রয়েছে। বর্তমানে আইন অনুযায়ী, ধর্ষক গ্রেফতার হলে ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দেওয়ার বিধান রয়েছে। আর যদি আসামি পলাতক থাকে, তাহলে ৬০ দিনের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করতে হয়। প্রয়োজন হলে আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে আরও ৩০ দিন সময় নেওয়া যায়।
সম্প্রতি মাগুরার শিশু আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলার বিচারে হাইকোর্ট ১৮০ দিনের মধ্যে বিচার সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং ৩০ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করার কথা বলেছেন। আইন উপদেষ্টা আরও দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত এবং ৯০ দিনের মধ্যে বিচার সম্পন্ন করার সুপারিশ করেছেন। এমনকি আন্দোলনের মুখে তিনি বলেছেন, যদি তদন্ত রিপোর্ট প্রস্তুত থাকে, তবে ৭ দিনের মধ্যেই বিচার শেষ করা সম্ভব। এ জন্য বিশেষ অধ্যাদেশ জারি করার পরিকল্পনার কথাও তিনি জানিয়েছেন।
বিচার দ্রুত করার জন্য নতুন আইন প্রয়োজন কি?
বর্তমান নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে বলা আছে, সর্বোচ্চ ৬০ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে হবে। যদি হাইকোর্ট ৩০ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করার নির্দেশ দেন, তাহলে নতুন অধ্যাদেশ বা আইন জারির প্রয়োজনীয়তা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। কারণ, আইনি কাঠামোর মধ্যেই দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব।
হাইকোর্টের নির্দেশ বাস্তবায়নের জন্য আলাদা আইন প্রয়োজন হয় না। যদি তদন্ত ৭ দিনের মধ্যেই সম্পন্ন করা সম্ভব হয়, তাহলে নতুন আইন করার প্রয়োজন কোথায়? এছাড়া, নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের অপরাধগুলো আমলযোগ্য, অর্থাৎ পুলিশ ওয়ারেন্ট ছাড়াই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে পারে।
বিচারে বিলম্বের প্রধান কারণ কী?
বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা মূলত তদন্ত ও প্রশাসনিক জটিলতার কারণে হয়। পুলিশের যথাযথ তদন্ত, সময়মতো চার্জশিট দাখিল এবং আদালতের ধারাবাহিক কার্যক্রম নিশ্চিত করা গেলে ধর্ষণ মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি সম্ভব। নতুন আইন প্রণয়ন বা অধ্যাদেশ জারির পরিবর্তে আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করাই বেশি জরুরি।
৭ দিনে বিচার: কতটা বাস্তবসম্মত?
সরকার যদি ৭ দিনের মধ্যে ধর্ষণ মামলার বিচার শেষ করার জন্য নতুন আইন বা অধ্যাদেশ জারি করে, তবে কিছু চ্যালেঞ্জ থেকে যাবে। যেমন,
-
ডিএনএ টেস্ট ও ফরেনসিক রিপোর্ট: ধর্ষণ মামলায় অপরাধ প্রমাণের জন্য ডিএনএ টেস্ট অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি সম্পন্ন করতে সাধারণত নির্দিষ্ট সময় লাগে। যদি প্রাথমিকভাবে অভিযুক্তের অপরাধ প্রমাণিত না হয়, তাহলে তদন্ত আরও সময়সাপেক্ষ হতে পারে।
-
প্রশাসনিক সমন্বয়: তদন্ত কর্মকর্তারা, সরকারি কৌঁসুলিরা এবং বিচারকরা যদি সমন্বিতভাবে কাজ না করেন, তাহলে দ্রুত বিচার সম্ভব হবে না। আইন থাকলেও প্রশাসনিক সমর্থন ছাড়া এটি কার্যকর হবে না।
-
সংবিধান ও ন্যায়বিচার: সংবিধানের আলোকে বিচার নিশ্চিত করতে সময় লাগতে পারে। চটজলদি বিচার করতে গিয়ে যদি যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করা হয়, তাহলে নির্দোষ ব্যক্তির শাস্তি পাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।
নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলাগুলোতে দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা প্রয়োজন, তবে সেটি যেন আইনি কাঠামোর মধ্যে থেকেই হয়। নতুন অধ্যাদেশ জারি করার পরিবর্তে প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধি, তদন্ত প্রক্রিয়া দ্রুততর করা এবং আদালতের কার্যক্রম নিয়মিতভাবে পরিচালনার উপর জোর দেওয়া উচিত। সংবিধানের মধ্যে থেকেই ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা সম্ভব, শুধুমাত্র আইনের সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
লেখক : আপিল বিভাগ, সুপ্রিমকোর্ট
বাংলাবার্তা/এমএইচ