
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে নতুন দুই বিচারপতির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান এবং বিচারপতি ফারাহ মাহবুব মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) সকালে শপথ নিয়েছেন। এই শপথ গ্রহণের অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয় সুপ্রিম কোর্টের জাজেজ লাউঞ্জে, যেখানে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ তাদের শপথ বাক্য পাঠ করান।
গত সোমবার রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের দুই বিচারপতি, এ কে এম আসাদুজ্জামান এবং ফারাহ মাহবুবকে আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেন। রাষ্ট্রপতির আদেশে, আইন মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করে তাদের নিয়োগ নিশ্চিত করেছে। এই নিয়োগ শপথ গ্রহণের তারিখ থেকে কার্যকর হবে।
নতুন এই নিয়োগের পর, বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান এবং বিচারপতি ফারাহ মাহবুব সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে কাজ করবেন। এই নিয়োগটি সুপ্রিম জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিলের সুপারিশ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি এবং প্রধান বিচারপতির পরামর্শক্রমে করা হয়েছে।
বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামানের পেশাগত জীবন
বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ১৯৬৯ সালের ১ মার্চ রাজশাহী জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন এবং ১৯৮৩ সালে জেলা আদালতে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। ১৯৮৫ সালে তিনি হাইকোর্ট বিভাগের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন এবং ২০০১ সালে আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। ২০০৩ সালে তাকে হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় এবং ২০০৫ সালে স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান।
বিচারপতি ফারাহ মাহবুবের পেশাগত জীবন
বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি এবং এলএলএম পাস করে ১৯৯২ সালে আইন পেশা শুরু করেন। ১৯৯৪ সালে তিনি হাইকোর্টে এবং ২০০২ সালে আপিল বিভাগে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। ২০০৪ সালে তিনি হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান এবং ২০০৬ সালে স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। বিচারপতি ফারাহ মাহবুব বাংলাদেশের প্রখ্যাত আইনজীবী এবং সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমানের মেয়ে।
উল্লেখযোগ্য রায়
বিচারপতি ফারাহ মাহবুব তার বিচারিক জীবনে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ এবং আলোচিত রায় প্রদান করেছেন। তার উল্লেখযোগ্য রায়গুলোর মধ্যে রয়েছে:
আজিমপুর কবরস্থান রক্ষা সংক্রান্ত রায়
ধর্ষণের শিকার নারীদের দ্রুত মামলা নেয়ার বিষয়ে নীতিমালা
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর প্রথাগত অধিকার রক্ষার রায়
শিশু জিহাদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণের রায়, যিনি অবহেলাজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্যানেল শিক্ষকদের চাকরি সরকারিকরণের রায়
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীদের হলফনামা বাধ্যতামূলক করার রায়
এইসব রায়ের মাধ্যমে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব দেশের বিচার ব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন এবং তাকে একজন মেধাবী ও সাহসী বিচারপতি হিসেবে সম্মানিত করা হয়।
নতুন দায়িত্বের চ্যালেঞ্জ
বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি ফারাহ মাহবুবের নতুন দায়িত্ব শুরু হলো আজ থেকে। আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে তাদের কার্যকাল গুরুত্বপূর্ণ বিচারিক কাজের সাক্ষী হয়ে থাকবে। তাদের নেতৃত্বে, দেশের বিচার ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী হবে, এবং আইনগত ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ