
ছবি: সংগৃহীত
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ছাত্র ও কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম নেতা আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডে আলোচিত চার আসামিকে গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। একইসঙ্গে এ মামলার তদন্ত ২ মাসের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদার। তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নতুন সময়সীমা ১৫ জুন নির্ধারণ করা হয়েছে।
বুধবার (৯ এপ্রিল) শুনানিতে এই আদেশ দেন বিচারপতির নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল। প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম, গাজী এম এইচ তামিম এবং আব্দুস সাত্তার পালোয়ান। পরে মিজানুল ইসলাম জানান, এ মামলায় মোট ২৬ জনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রাথমিক প্রমাণ মিলেছে। চারজনকে গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে এবং তদন্ত কার্যক্রম এখন শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
চার গ্রেফতার হওয়া আসামি:
১. সাবেক এসআই আমির হোসেন
২. কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়
৩. বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর শরিফুল ইসলাম
৪. ছাত্রলীগ নেতা ইমরান চৌধুরী আকাশ
তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা গত বছরের ১৬ জুলাই বিক্ষোভ চলাকালে ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা করেন বা সেই ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন। আদালতের আদেশ অনুযায়ী, তদন্তের স্বার্থে তাদের গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে রাখা হবে।
হত্যাকাণ্ডের পটভূমি:
২০২৪ সালের ১৬ জুলাই, কোটা সংস্কারের দাবিতে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পার্ক মোড়ে ছাত্ররা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে অংশ নেয়। এসময় পুলিশের গুলিতে নিহত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। সহপাঠীরা গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান, তবে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এই হত্যাকাণ্ডের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা ও সাধারণ মানুষ এই ঘটনার ন্যায়বিচার দাবি করে আন্দোলনে সোচ্চার হন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে নতুনভাবে তীব্র হয়ে ওঠে কোটা সংস্কার আন্দোলন, যার একধরনের প্রতীক হয়ে ওঠেন আবু সাঈদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের আওতায় মামলা:
আবু সাঈদ হত্যাকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের উদাহরণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যা, যেখানে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সদস্য ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা জড়িত। তাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এর বিচার শুরু হয়। গত ২ মার্চ ট্রাইব্যুনাল চার আসামিকে হাজির করার নির্দেশ দেয় এবং ৯ এপ্রিল তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়।
এই আদেশের মাধ্যমে মামলাটি আনুষ্ঠানিকভাবে বিচারিক গতি পেল। ট্রাইব্যুনাল আশাবাদ ব্যক্ত করেছে, নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যেই তদন্ত শেষ করে তারা পূর্ণাঙ্গ অভিযোগপত্র গ্রহণের দিকে অগ্রসর হতে পারবে।
আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডকে নতুন প্রজন্মের রাজনৈতিক আন্দোলনের এক জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে। এখন পুরো দেশের নজর রয়েছে এই মামলার তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়ার দিকে। মানুষ আশা করছে, এই হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ এবং দৃষ্টান্তমূলক।
বাংলাবার্তা/এমএইচ