
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম আলোচিত এবং বেদনাদায়ক সাংবাদিক হত্যা মামলাগুলোর একটি সাগর সরোওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলা। এই ঘটনায় জাতি যেমন স্তব্ধ হয়েছিল, ঠিক তেমনি বিচারহীনতার দীর্ঘসূত্রিতায় ক্ষুব্ধও। সেই বিচারের প্রতীক্ষা যেন কোনো শেষ দেখতে পাচ্ছে না। মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমার তারিখ আবারও পিছিয়ে ২১ মে নির্ধারণ করেছেন আদালত। এই নিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময় ১১৮তম বার পেছানো হলো।
ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এম এ আজহারুল ইসলাম মামলার তদন্ত কর্মকর্তা, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আজিজুল হকের ব্যর্থতার কথা বিবেচনায় নিয়ে নতুন এই সময় নির্ধারণ করেন।
প্রায় ১২ বছর আগে ঘটে যাওয়া এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর থেকে এখন পর্যন্ত মামলার কোনও চূড়ান্ত অগ্রগতি না থাকায় ক্ষোভ বিরাজ করছে সাংবাদিক সমাজ এবং নাগরিকদের মাঝে। এমনকি বারবার তদন্ত সংস্থা পরিবর্তন করা হলেও প্রকৃত রহস্য আজও অধরা।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ভোরে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের নিজ বাসায় খুন হন মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরোওয়ার এবং এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি। হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয় তাদের পাঁচ বছর বয়সী ছেলে মাহির সরওয়ার মেঘের সামনেই, যিনি সেই সময় বাসায় উপস্থিত ছিলেন।
ঘটনার পরদিন রুনির ভাই নওশের আলী রোমান বাদী হয়ে শেরেবাংলা নগর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। শুরুতে র্যাব ও ডিবি তদন্ত করলেও শেষ পর্যন্ত ২০২3 সালের ৪ নভেম্বর মামলার তদন্তভার যায় পিবিআইয়ের হাতে। এরপরও বিচার প্রক্রিয়া যেন স্থবির অবস্থায় রয়ে গেছে।
পিবিআই জানিয়েছে, তদন্ত কর্মকর্তারা এখন পর্যন্ত অনুমতি ছাড়া অর্ধশতাধিক ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। তাদের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত এক বিচারপতিসহ ছয়জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে—যাদের মধ্যে রয়েছেন বরখাস্ত সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসান, সাবেক এডিজি মশিউর রহমান, সাবেক বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, প্রাক্তন নৌবাহিনী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সোহেল, মামলার অভিযুক্ত হুমায়ুন কবির ও পলাশ রুদ্র পাল।
এতদিনেও কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি না থাকায় এ মামলাটি এখন বিচারহীনতার একটি প্রতীক হয়ে উঠেছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ