
ছবি: সংগৃহীত
দুর্নীতির দায়ে করা দুই পৃথক মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এবং তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে ঢাকার একটি বিশেষ আদালত। একইসঙ্গে এই দুই মামলায় মোট ২৯ জনের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি হয়েছে, যাদের অধিকাংশই সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বা রাজউক ও গৃহায়ন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি।
মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক জাকির হোসেন গালিব দুদকের (দুর্নীতি দমন কমিশন) চার্জশিট আমলে নিয়ে এই পরোয়ানা জারি করেন। মামলার অভিযোগপত্র অনুযায়ী, আসামিরা আদালতে হাজির না হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে এই পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। প্রসিকিউশন বিভাগের সহকারী পরিচালক আমিনুল ইসলাম আদালতের আদেশের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
দুদকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পূর্বাচল আবাসিক প্রকল্পের ২৭ নম্বর সেক্টরের একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ৬০ কাঠা জায়গাজুড়ে ছয়টি প্লট বরাদ্দে অনিয়ম, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে। এই প্লটগুলো বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যরা প্রভাব খাটান এবং প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা যোগসাজশ করে এই বরাদ্দ বাস্তবায়ন করেন।
চার্জশিটে শেখ হাসিনার পাশাপাশি তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, সাবেক প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, শেখ রেহানার পরিবারের সদস্যসহ গণপূর্ত ও রাজউকের কর্মকর্তাদের নাম রয়েছে। বরাদ্দপ্রাপ্তদের মধ্যে যারা যোগ্য ছিলেন না, তাদের নামে এই প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয় "অসৎ উদ্দেশ্যে" এবং "প্রশাসনিক ক্ষমতার অপব্যবহার" করে।
এ প্রসঙ্গে মামলার অভিযোগে দণ্ডবিধির ১৬১, ১৬৩, ১৬৪, ৪০৯ এবং ১০৯ ধারা ছাড়াও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ছাত্র ও সাধারণ জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ ত্যাগ করেন এবং এরপর ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন। সেখানে অবস্থানরত অবস্থায়ই তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্তে অগ্রগতি হয় এবং জানুয়ারি মাসে মামলা দুটি দায়ের করে দুদক। এখন এই মামলাগুলো বিচারিক প্রক্রিয়ায় প্রবেশ করায় রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই মামলাগুলো বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে নতুন মোড় তৈরি করতে পারে। একটি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সরাসরি দুর্নীতির মামলা, এবং তার সন্তানসহ নিকট আত্মীয়দের জড়িত থাকা—দেশের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক স্বচ্ছতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ