
ছবি: সংগৃহীত
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ২০২৩ সালের জুলাই-আগস্টে অনুষ্ঠিত আন্দোলন চলাকালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন আগামী ২৪ জুনের মধ্যে দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এ সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুতের জন্য এই সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। রোববার (২০ এপ্রিল) ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এই আদেশ দেন।
এই আদেশ আসে প্রসিকিউশনের একটি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে, যেখানে তারা মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের তদন্তের জন্য নির্ধারিত সময়সীমা বৃদ্ধির আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল আবেদনে সম্মতি জানিয়ে তদন্তকারীদের ২৪ জুন পর্যন্ত সময় দেয়, যাতে তারা অভিযোগপত্র চূড়ান্তভাবে আদালতে উপস্থাপন করতে পারেন।
আলোচিত মামলাটিতে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের মন্ত্রী ও উপদেষ্টারা। ট্রাইব্যুনালে হাজির হওয়া ১৯ জন অভিযুক্তের মধ্যে রয়েছেন—
-
সাবেক মন্ত্রীবর্গ: আনিসুল হক (সাবেক আইনমন্ত্রী), ফারুক খান (বাণিজ্য), ডা. দীপু মনি (শিক্ষা), আব্দুর রাজ্জাক (কৃষি), শাজাহান খান (পরিবহন), গোলাম দস্তগীর গাজী (শিল্প), আমির হোসেন আমু (শিল্প), কামরুল ইসলাম (খাদ্য), রাশেদ খান মেনন (পর্যটন) ও হাসানুল হক ইনু (তথ্য)।
-
সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও উপদেষ্টা: কামাল আহমেদ মজুমদার, জুনায়েদ আহমেদ পলক, তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, সালমান এফ রহমান।
-
অন্যান্য: সোলাইমান সেলিম (সাবেক সংসদ সদস্য), এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক (আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি), জাহাংগীর আলম (সাবেক স্বরাষ্ট্রসচিব), চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন (সাবেক আইজিপি), জিয়াউল আহসান (সাবেক এনটিএমসি মহাপরিচালক)।
ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা গেছে, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এই মামলায় ১৯ জন আসামিকে সশরীরে হাজির হতে নির্দেশ দেয়। সে অনুযায়ী রোববার সকাল থেকে ট্রাইব্যুনাল চত্বরে ব্যাপক নিরাপত্তার মধ্যে একে একে তাদের আনা হয় এবং বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন যুগপৎ আন্দোলনের বিরুদ্ধে সরকারি দলের কঠোর অবস্থান এবং নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে বহু বেসামরিক ব্যক্তি হতাহত হয়। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা এসব ঘটনায় ‘নৃশংস দমনপীড়নের’ অভিযোগ তোলে, যার পরিপ্রেক্ষিতে একাধিক মামলা হয় এবং তদন্ত শুরু করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
এই মামলাটি বাংলাদেশের ইতিহাসে বিরল এক নজির হয়ে উঠেছে, যেখানে ক্ষমতাচ্যুত সরকারের শীর্ষ নেতাদের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আইনের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হচ্ছে। বিচার বিশ্লেষকদের মতে, এই মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া দেশীয় রাজনীতিতে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এও বলা হচ্ছে, এই মামলার রায় বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ বিচারব্যবস্থার ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মানদণ্ড নির্ধারণ করবে।
আদালত সূত্র আরও জানিয়েছে, তদন্তকারী সংস্থা এরই মধ্যে শেখ হাসিনার সময়কার বেশ কিছু প্রশাসনিক নির্দেশনা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চলমান ও গোপনীয় কার্যক্রম, রাজনৈতিক বক্তব্য ও মাঠপর্যায়ের বাস্তবায়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নথিপত্র সংগ্রহ করেছে। এর ওপর ভিত্তি করেই চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করা হচ্ছে।
এদিকে, অভিযুক্তদের আইনজীবীরা এই মামলাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং প্রতিশোধপরায়ণতাপূর্ণ বলেও দাবি করেছেন। তাদের মতে, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনের লক্ষ্যে এই মামলার আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। তবে ট্রাইব্যুনালের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কেবল প্রমাণ ও সাক্ষ্যের ভিত্তিতেই বিচার প্রক্রিয়া চলবে।
২৪ জুনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পরপরই মামলার চার্জ গঠনের শুনানি শুরু হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আদালত নতুন দিন ধার্য না করলে ওই দিনেই পরবর্তী প্রক্রিয়া শুরু হবে। তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল ও পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে এখন নজর দেশবাসীর।
বাংলাবার্তা/এমএইচ