
ছবি: সংগৃহীত
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানার স্বামী শফিক আহমেদ সিদ্দিক, শেখ রেহানার দেবর তারিক আহমেদ সিদ্দিক, এবং তাদের মালিকানাধীন প্রচ্ছায়া লিমিটেডের ৮ পরিচালকসহ আরও কয়েকজনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. জাকির হোসেন গালিব এই নিষেধাজ্ঞা দেন। আদালত এই নির্দেশনা দিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে, যেখানে জানানো হয় যে, এসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে প্রায় ৫৯ হাজার কোটি টাকা লোপাট বা আত্মসাৎ করার অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন রয়েছে।
নিষেধাজ্ঞা প্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন—শেখ রেহানার স্বামী শফিক আহমেদ সিদ্দিক, তারিক আহমেদ সিদ্দিকের স্ত্রী শাহিন সিদ্দিক, তাদের মেয়ে বুশরা সিদ্দিক ও নওরিন তাসমিয়া সিদ্দিক, সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল শহীদ উদ্দিন খান, তার স্ত্রী ফারজানা আনজুম, এবং তাদের দুই মেয়ে শেহতাজ মুন্নাসী খান ও পারিজা পাইনাজ খান।
দুদকের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছিল যে, তদন্তের স্বার্থে তাদের বিদেশযাত্রা রোধ করা অত্যন্ত জরুরি, কারণ তাদের পালিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং এতে প্রমাণ সংগ্রহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতে পারে। এসব কর্মকর্তারা গোপনে বিদেশে পালানোর চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে।
প্রতিবেদন অনুসারে, দুর্নীতি দমন কমিশন এই চক্রের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করছে এবং সম্ভাব্য অভিযোগের বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত। চিহ্নিত ব্যক্তিদের বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা দেশের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে, এবং সুষ্ঠু তদন্ত কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি হতে পারে।
এ ব্যাপারে আইনজীবীরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, এই ধরনের উচ্চ পর্যায়ের দুর্নীতির অভিযোগ বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।
দুদক অবশ্য এই মামলা নিয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে এবং তদন্ত প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে। এরই মধ্যে তদন্তকারী সংস্থার পক্ষ থেকে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে যে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বিদেশে পালিয়ে গেলে তদন্ত কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে, যার ফলে তারা আন্তর্জাতিক আইনি পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হতে পারেন।
এছাড়া, শফিক আহমেদ সিদ্দিক এবং তারিক আহমেদ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে আরও কয়েকটি অভিযোগ রয়েছে, যার মধ্যে রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন প্রকল্পে প্রভাব খাটানোর অভিযোগও রয়েছে। এসব অভিযোগের মাধ্যমে দেশের জনগণের কাছে দুর্নীতির বিরুদ্ধে একটি কঠোর বার্তা পৌঁছানোর চেষ্টা করছে সরকার।
তবে, এই ধরনের পদক্ষেপের ফলে সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া তৈরি হতে পারে, কারণ শেখ রেহানা এবং তার পরিবারের সদস্যরা বর্তমান সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে পরিচিত। সরকার এখনো এর ওপর নির্দিষ্ট মন্তব্য করেনি, তবে বিষয়টি রাজনৈতিকভাবে বেশ তোলপাড় সৃষ্টি করেছে।
এখন দেখার বিষয় হবে যে, দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার এই সিদ্ধান্তের পর তদন্ত প্রক্রিয়া কিভাবে এগিয়ে যায় এবং এর ফলস্বরূপ আরও কোন বড় ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়।
বাংলাবার্তা/এমএইচ