ফাইল ছবি
বিশ্ববাজারে ২০২৩ সালে স্বর্ণের দাম প্রতি আউন্স চার হাজার ডলারে উঠতে পারে বলে মনে করেন সুইস এশিয়া ক্যাপিটালের এমডি ও প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা জুয়েরগ কিয়েনার। সম্প্রতি সিএনবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করেন জুয়েরগ কিয়েনার।
সাক্ষাৎকারে জুয়েরগ কিয়েনার বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সুদের হার বৃদ্ধি ও মন্দার ভয়ে বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। আর সে কারণেই নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে স্বর্ণের চাহিদা আবার বাড়তে থাকেব। এতে ২০২৩ সালে দাম বেড়ে প্রতি আউন্স দুই হাজার ৫০০ থেকে চার হাজার ডলার পর্যন্ত উঠতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘ভালো সম্ভাবনা আছে স্বর্ণের বাজারে বড় উল্লম্ফন ঘটবে। এটা ১০ শতাংশ বা ২০ শতাংশ বৃদ্ধি নয়, বরং বড় আকারেই বাড়বে। যা নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে।’
কিয়েনার ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘অনেক দেশই কিছুটা মন্দায় পড়তে পারে। এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর সুদের হার বৃদ্ধির প্রবণতা ধীর হবে। ফলে স্বর্ণ আরো আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে। এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো স্বর্ণে ব্যাপক হারে বিনিয়োগ করেছে। ’
ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের (ডাব্লিউজিসি) হিসাবে, বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো মোট ৪০০ টন স্বর্ণ ক্রয় করে, যা ২০১৮ সালের একই সময়ে তাদের ক্রয় করা ২৪১ টনের প্রায় দ্বিগুণ।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, স্বর্ণের সবচেয়ে বড় ক্রেতা দেশ চীন। এ মাসের শুরুতে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঘোষণা দিয়েছে তারা তাদের রিজার্ভে ১.৮ বিলিয়ন ডলার মূল্যের স্বর্ণ যোগ করেছে। এতে তাদের রিজার্ভে স্বর্ণের মজুদ বেড়ে হয়েছে ১১২ বিলিয়ন ডলার।
কিয়েনার বলেন, ‘২০০০ সাল থেকে আমরা দেখেছি যেকোনো মুদ্রাতেই স্বর্ণ থেকে বার্ষিক রিটার্ন এসেছে ৮ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত। যেটা বন্ড মার্কেটে আপনি অর্জন করতে পারবেন না। এমনকি ইক্যুইটি মার্কেটেও তা সম্ভব নয়। বিশেষ করে মূল্যস্ফীতির এ সময়ে বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ হিসেবে স্বর্ণে বিনিয়োগ করবে।’
তবে স্বর্ণের দাম দ্বিগুণ হবে আগামী বছর এ বিষয়টির সঙ্গে একমত নন স্ল্যাটস্টোন ওয়েলথের সিনিয়র বাজার বিশ্লেষক কেনি পোলকারি। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি না ২০২৩ সালে স্বর্ণের দাম প্রতি আউন্স চার হাজার ডলারে উঠবে, তবে দাম এক হাজার ৯০০ ডলারে উঠতে পারে। দামের বিষয়টি ঠিক হবে মূল্যস্ফীতি ও মন্দার মাঝখানে দাঁড়িয়ে নীতিনির্ধারকরা সুদের হার কিভাবে বাড়ান তার ওপর।’
ভারতের সবচেয়ে বড় ব্রোকারেজ জেরোধার সহপ্রতিষ্ঠাতা নিখিল কামাথ বলেন, ‘২০২৩ সালে বিনিয়োগকারীরা তাদের পোর্টফোলিওতে ১০ থেকে ২০ শতাংশ স্বর্ণ যোগ করবে। নতুন বছরের জন্য এটা তাদের কৌশল হবে।’
তার মতে, ঐতিহ্যগতভাবেই মূল্যস্ফীতির বিপরীতে স্বর্ণ ঢাল হিসেবে ব্যবহার হয়।
২০২২ সালের শুরুতে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম ছিল প্রতি আউন্স এক হাজার ৮৩০ ডলার। রাশিয়ার ইউক্রেনে হামলার জেরে মার্চের শুরুতে দাম বেড়ে হয় প্রতি আউন্স এক হাজার ৯৫৭ ডলার। পরবর্তী সময়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের আগ্রাসী সুদের হার বৃদ্ধিতে ডলার শক্তিশালী হয়। এতে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে আকর্ষণ হারায়, পড়তির দিকে থাকে স্বর্ণ। তবে সুদের হার বৃদ্ধি কিছুটা ধীর হওয়ায় আবারও বাড়তে শুরু করেছে মূল্যবান এ ধাতুর দাম। গত ২২ ডিসেম্বর বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম দাঁড়ায় প্রতি আউন্স এক হাজার ৮১৫ ডলার, যা ছয় মাসে সর্বোচ্চ।
বর্তমানে স্বর্ণের দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে ট্রেডিং ইকোনমিকস জানায়, বিনিয়োগকারীরা আশঙ্কা করছে আগামী বছর যুক্তরাষ্ট্র মন্দায় পড়তে পারে। ফলে সুদের হার বৃদ্ধির প্রবণতা কমে আসবে। নিরাপদ হিসেবে স্বর্ণের চাহিদা বাড়বে। তাই আবারও দাম বাড়তে শুরু করেছে।
সূত্র : সিএনবিসি, ট্রেডিং ইকোনমিকস।