ছবি : সংগৃহীত
২০১৯-২০২০ হতে ২০২১-২০২২ এই ৩ অর্থবছরের অডিট রিপোর্টে এস আলম ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেডের বিরুদ্ধে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকি দেওয়ার প্রমাণ পেয়েছে কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট (চট্টগ্রাম)।
অডিট প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৩ বছরে এই কোম্পানি এক হাজার ৯৫৯ কোটি ৭৭ লাখ ৮৭ হাজার ৫২৯ টাকার মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে।
চট্টগ্রাম ভ্যাট কমিশনারেটের অতিরিক্ত কমিশনার তফছির উদ্দিন ভূঞারকে প্রধান করে ৫ সদস্যের কমিটির পর্যালোচনায় ভ্যাট ফাঁকির এই অভিযোগের সত্যতা পায়। যা গত ২১ মে প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ করা হয়।
বিগত ২০১৯-২০২০ হতে ২০২১-২০২২ অর্থবছরে বিভিন্ন সেবা গ্রহণ ও অন্যান্য কিছু ক্রয়ের বিপরীতে ভ্যাটের পরিমাণ ছিল ৭ কোটি ৫৫ লাখ ৯২ হাজার ৬৭০ টাকা। পরে প্রতিষ্ঠানটি পরিশোধ করে ১ কোটি ৯২ লাখ ২৭ হাজার ৭৪৯ টাকা । ফলে ভ্যাট পরিশোধ করেনি ৫ কোটি ৬৩ লাখ ৬৪ হাজার ৯২১ টাকা।
গত ৯ জুন চট্টগ্রাম কাস্টমস, ভ্যাট ও এক্সাইজ কমিশনারেট কোম্পানিকে পরবর্তী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে ফাঁকি দেওয়া ১ হাজার ৯৫৯ কোটি ৭৭ লাখ ৮৭ হাজার ৫২৯ টাকা ও জরিমানা এবং এর ওপর প্রযোজ্য সুদের টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে পরিশোধের নির্দেশ দেওয়া হয়।
ভ্যাট বাবদ ১ হাজার ৯১৭ কোটি ৩৯ লাখ ২৯ হাজার ৪৪৭ টাকা ও জরিমানা বাবদ ১ হাজার ৯১১ কোটি ৭৬ লাখ ৬৪ হাজার ৫২৫ টাকা প্রযোজ্য সুদ হিসাব করে জমা দিতে হবে।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, এই টাকা আগামী ৩ জুলাইয়ের মধ্যে পরিশোধ করার সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে টাকা পরিশোধ না করলে বা আদেশের বিরুদ্ধে আপিল না করলে কোম্পানির বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ভ্যাট, জরিমানা ও সুদের টাকা আদায়ে ব্যবস্থা নেবে।
চট্টগ্রাম আয়কর অফিসে কোম্পানিটির দাখিল করা ভ্যাট রিটার্নের বিক্রি সংক্রান্ত তথ্য এবং ২০১৯-২০ থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে কর অফিস তাদের ভ্যাট ফাঁকির তথ্য পায়।
অডিট রিপোর্টে বলা হয়েছে, কোম্পানিটি তাদের চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্সি (সিএ) ফার্মের নিরীক্ষিত বার্ষিক প্রতিবেদনের চেয়ে ভ্যাট রিটার্নে বিক্রি কম দেখিয়েছে। বার্ষিক প্রতিবেদনটি কোম্পানিই কর কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিয়েছে।
পর্যালোচনায় দেখা যায়, বিগত ৩ অর্থবছরে কোম্পানিটির মোট বিক্রি ১২ হাজার ৭২৫ কোটি ৯৫ লাখ ৪৪ হাজার ৯১১ টাকা। অথচ ভ্যাট দাখিলে বিক্রয়মূল্য ২ হাজার ৪০১ কোটি ৯২ লাখ ৬১ হাজার ২৫৯ টাকা। কম দেখানো হয়েছে ১০ হাজার ৩২৪ কোটি ২ লাখ ৭৯ হাজার ৬৫২ টাকা। প্রতিষ্ঠানটি ১ হাজার ৩৪৬ কোটি ৬১ লাখ ২৩ হাজার ৪৩২ টাকা ভ্যাট পরিশোধ করেনি।
এস আলম ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেড তাদের অডিটকৃত আর্থিক বিবরণীতে দেখিয়েছে, এই তিন বছরে তারা ১১ হাজার ২৪৫ কোটি টাকার কাঁচামাল কিনেছে। কিন্তু কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে দাখিল করা ভ্যাট রিটার্ন ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কাগজপত্রে দেখা যায়, কাঁচামাল ক্রয় করেছে তিন হাজার ১৪৫ কোটি টাকার।
চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্সি (সিএ) ফার্মের অডিটকৃত কোম্পানির নিজস্ব আর্থিক বিবরণীতে প্রদর্শিত অর্থের চেয়ে যা ৮ হাজার ১০০ কোটি ৩৯ লাখ টাকা কম।
বাংলাবার্তা/এআর