ছবি : সংগৃহীত
দেশের অর্থনীতিতে রয়ে গেছে ফ্যাসিস্ট আমলের নানা কঠিন সমস্যা। মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমলেও সন্তুষ্ট হওয়ার পর্যায়ে নেই। দরকার ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও বিনিয়োগ। অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কার ও নানা তৎপরতায় সংকট সমাধানের চেষ্টা চালাচ্ছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ‘প্রবৃদ্ধি ধরে রেখে সব সমস্যা সমাধানে ২০২৫ সালটা হবে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার বছর।’
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধান করা না গেলে আগামীতে অবস্থা আরও জটিল হয়ে ওঠার যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারে যারা আছেন, তাদের বিভিন্ন কমিশন আছে, টাস্কফোর্স আছে। তাদের সক্ষমতা ও দূরদর্শী কর্ম-পরিকল্পনায় ২০২৫ সালের প্রত্যাশা ও বাস্তবতাকে ধারণ করে এসব চ্যালেঞ্জ সামাল দিয়ে ইতিবাচক পরিবেশে ২০২৬ সালে যাওয়ার কথা বলছেন অর্থনীতিবিদরা।
নতুন বছরে দেশের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে কয়েকটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) প্রবৃদ্ধি বাড়ানো, বিনিয়োগ বাড়িয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার পরামর্শ অর্থনীতিবিদদের।
যদিও দেশে সম্প্রতি অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি বেশ কিছুটা কমে গেছে। কারণ কাক্সিক্ষত মাত্রায় বিনিয়োগ বৃদ্ধি না পাওয়ার কারণে প্রত্যাশিত মাত্রায় জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করা যাচ্ছে না। বর্তমানে রপ্তানি খাতে সংকোচন দেখা যাচ্ছে। পণ্য রপ্তানি খাত সংকুচিত হলে তা বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের ওপর এক রকম চাপ সৃষ্টি করে।
রপ্তানি আয় কমে গেলে বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রা টাকার বিনিময় হার বা মান কমে যেতে পারে। স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন হলে তা আবার মূল্যস্ফীতিকে ঊর্ধ্বমুখী করে তোলে। কাজেই রাজস্ব আহরণ বাড়ানোর পাশাপাশি অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে হলে রপ্তানি খাতকে আরও বেশি শক্তিশালী করতে হবে।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আগামী বছরটা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বছর হবে। আগের বছরের প্রত্যাশার মধ্য দিয়ে নতুন বছর শুরু হবে। নির্বাচনের প্রস্তুতির একটা বিষয়সহ অর্থনীতির অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার চেষ্টা এই বছরে থাকতে হবে। বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান এবং মূল্যস্ফীতির মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার বছর হবে ২০২৫।
২০২৪ সালের শেষের দিকে রপ্তানি খাতের অগ্রগতি তুলে ধরে তিনি বলেন, আগের বছরের শেষের দিকে দেখেছি রপ্তানি খাত ভালো করছে। রিজার্ভের অবনমন থামানো গেছে। ফলে অনিশ্চয়তা যা ছিল, দেশি বা বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যে নেতিবাচক প্রভাব ছিল, তা কেটে গেছে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার পর। এটাকে সুসংহত করতে হবে। একই সঙ্গে পুরনো বছরের চ্যালেঞ্জ ও নতুন বছরের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলাও করতে হবে। বিশেষ করে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বিনিয়োগে চাঞ্চল্য আনা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, মানুষের ক্রয়ক্ষমতার অবনমন রোধ করার পাশাপাশি সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিগুলো শক্তিশালী করতে হবে।
এলডিসি থেকে উত্তরণ নিয়ে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ২০২৫ সালে আমাদের এলডিসি থেকে উত্তরণের প্রস্তুতিটা ভালোভাবে বেগবান করতে হবে। সব মিলিয়ে ২০২৪ সালের এত বড় একটা পরিবর্তনের আকাক্সক্ষা, প্রত্যাশা ও বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ থাকবে। অর্থনীতির যে চলমান চ্যালেঞ্জ, তা মোকাবিলা করতে হবে, একই সঙ্গে সামষ্টিক অর্থনীতির ব্যবস্থাপনাকে উন্নত করে প্রবৃদ্ধি ও বণ্টনের ভারসাম্য বজায় রেখে অগ্রসর হওয়ার একটা তাগিদ থাকবে। আমরা আশা করব, অন্তর্বর্তী সরকার ২০২৫ সালে প্রত্যাশা ও বাস্তবতাকে ধারণ করে এসব চ্যালেঞ্জ সামাল দিয়ে ইতিবাচক পরিবেশে ২০২৬ সালে যেতে পারবে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, ২০২৫ সালে অর্থনীতির প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনা। দ্বিতীয়ত, আমাদের বৈদেশিক বিনিময় হারের ক্রমাগত অবমূল্যায়ন হচ্ছে, তা স্থিতিশীল করা। এ জন্য আমাদের রপ্তানি আয় বাড়াতে হবে।
বাংলাবার্তা/এমআর