
প্রতীকী ছবি
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে দেশের ব্যাংক খাতে ক্রমবর্ধমান খেলাপি ঋণের চিত্র উঠে এসেছে। এতে দেখা গেছে, মাত্র পাঁচটি ব্যাংকের কাছেই মোট খেলাপি ঋণের অর্ধেকের বেশি অর্থ আটকে রয়েছে, যা ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থাকে আরও দুর্বল করে তুলছে।
খেলাপি ঋণের উদ্বেগজনক চিত্র
প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক খাতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকা, যা দেশের মোট ঋণের ১৭ শতাংশ। এর মধ্যে শীর্ষ ৫ ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা, যা মোট খেলাপির ৫১ শতাংশ। অর্থাৎ, দেশের ৬১টি ব্যাংকের মধ্যে মাত্র পাঁচটি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণই অর্ধেক ছাড়িয়ে গেছে।
অন্যদিকে, শীর্ষ ১০ ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ২ হাজার কোটি টাকা, যা মোট খেলাপির ৭১ শতাংশ। বাকি ৫১টি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৮৩ হাজার ৮৭ কোটি টাকা, যা মোট খেলাপির ২৯ শতাংশ।
ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থার অবনতি
শীর্ষ ৫ ব্যাংকের প্রতিটিতে খেলাপি ঋণের হার ৪০ শতাংশের ওপরে রয়েছে, যা ব্যাংকিং খাতের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। সাধারণত ৫ শতাংশের বেশি খেলাপি ঋণ থাকলে তা ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়। বর্তমানে ২০ শতাংশের বেশি খেলাপি ঋণ রয়েছে আরও ১৪টি ব্যাংকে।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, মোট খেলাপি ঋণের মধ্যে ৮২ শতাংশই আদায় অনিশ্চিত। এসব ঋণের বড় অংশ বিভিন্ন অনিয়ম ও লুটপাটের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়েছিল, যা এখন ফেরত পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।
প্রভাব ও সম্ভাব্য সমাধান
অতিরিক্ত খেলাপি ঋণের কারণে ব্যাংকগুলোর মূলধন সংকট দেখা দিচ্ছে এবং প্রভিশন ঘাটতিও বাড়ছে। ফলে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ সক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে, যা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য বিপজ্জনক। এ পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংকগুলোর প্রতি নীতি সহায়তা বাড়ালেও সংকট কাটিয়ে ওঠা এখনও বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে আছে।
খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় সংস্কার, কঠোর নজরদারি এবং দায়িত্বশীল ঋণ নীতি বাস্তবায়নের ওপর বিশেষজ্ঞরা গুরুত্ব দিচ্ছেন। অন্যথায়, দেশের ব্যাংকিং খাতে আরও বড় সংকট দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ