
ফাইল ছবি
দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসনামলে শেখ হাসিনার সরকারের অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার কারণে দেশের ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোতে নজিরবিহীন লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, তিন মাসের ব্যবধানে ঝুঁকিপূর্ণ ঋণ বেড়েছে ১ হাজার ১৭১ কোটি টাকা।
মূলধনের সংকট ও ঋণ খেলাপি বৃদ্ধি
প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশে ৩৫টি ফাইন্যান্স কোম্পানির মধ্যে ১১টি কোম্পানিতে ব্যাপক লুটপাট হয়েছে, ১৪টি কোম্পানি প্রয়োজনীয় মূলধন ধরে রাখতে সক্ষম হলেও ১৬টি কোম্পানি মূলধনে সংকটে ভুগছে। সবচেয়ে বিপর্যস্ত ৫টি কোম্পানির সম্পূর্ণ মূলধন ক্ষয় হয়ে গেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের সম্পদ থেকে কোনো আয় আসছে না, বরং লোকসানের মাত্রা দিন দিন বাড়ছে। ফলে শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দেওয়ার হারও কমে গেছে।
ঝুঁকিপূর্ণ ঋণের ঊর্ধ্বগতি
২০২৩ সালের জুনে ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোর ঝুঁকিপূর্ণ ঋণের পরিমাণ ছিল ৫৭ হাজার ১৪৭ কোটি টাকা, যা সেপ্টেম্বরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৮ হাজার ৩১৮ কোটি টাকায়। যদিও ২০২২ সালের তুলনায় কিছুটা কমেছে, তবে লুটপাট এবং ঋণ খেলাপির হার বৃদ্ধির কারণে এই ঋণ পরিমাণ আগামীতে আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মূলধন বিনিয়োগ থেকে আয়হীনতা
২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে প্রতি ১০০ টাকার বিপরীতে লোকসান ছিল ৪০ পয়সা, যা ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ টাকা ০২ পয়সায়। গত বছরের সেপ্টেম্বরে এই লোকসান আরও বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৩ টাকা ০২ পয়সায়। মূলধন বিনিয়োগ থেকে গড় হিসাবে এখন কোনো আয় হচ্ছে না, বরং ক্ষতি বাড়ছে।
খেলাপি ঋণ ও সম্পদের অবনতি
২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১৭ হাজার ৩২৭ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ২৪.৬১%। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে এটি বেড়ে দাঁড়ায় ২৬ হাজার ১৬৩ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৩৫.৫২%। অর্থাৎ, এক বছরে খেলাপি ঋণের হার ১১% বৃদ্ধি পেয়েছে।
তারল্য সংকট ও আমানতের নিম্ন প্রবৃদ্ধি
ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোর তারল্য সংকট আরও প্রকট হয়েছে। ২০২৩ সালের জুনে মোট তারল্য ছিল ১ লাখ ৭১৭ কোটি টাকা, যা সেপ্টেম্বরে কমে দাঁড়িয়েছে ৯৯ হাজার ৪৯৩ কোটি টাকায়। যদিও আমানতের পরিমাণ সামান্য বৃদ্ধি পেয়ে ৪৯ হাজার ৬৭১ কোটি টাকা হয়েছে, তবে মূলধনের ঘাটতি বেড়ে দ্বিগুণের বেশি হয়েছে।
ভবিষ্যৎ শঙ্কা ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোর এই অবস্থা দেশের সামগ্রিক আর্থিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি স্বরূপ। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যদি দ্রুত কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া না হয়, তাহলে আগামীতে আরও বড় ধরনের আর্থিক সংকটের মুখোমুখি হতে পারে দেশ।
বাংলাবার্তা/এমএইচ