
ছবি: সংগৃহীত
গত ছয় মাসে চট্টগ্রামে ছোট-বড় অন্তত ৫২টি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে কাজ হারিয়েছেন কয়েক হাজার শ্রমিক। পাশাপাশি, চলমান অর্থনৈতিক সংকটের কারণে কর্মরত অনেক কারখানাই কার্যাদেশ সংকটে ভুগছে।
শিল্প পুলিশের দেওয়া তথ্যমতে, চট্টগ্রামের অন্তত ৪৪টি পোশাক কারখানা ঈদের আগে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধ নিয়ে শঙ্কার মধ্যে আছে। অর্থনৈতিক চাপে থাকা এসব কারখানাকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে শিল্প পুলিশ। তবে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) এই তালিকাকে স্বীকার করতে নারাজ।
শিল্প পুলিশ-৩ এর দেওয়া পরিসংখ্যান অনুসারে, চট্টগ্রামে বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমএ-সহ বিভিন্ন সংগঠনের আওতাভুক্ত মোট ৫৮০টি পোশাক কারখানার মধ্যে বর্তমানে চালু রয়েছে ৫২৮টি। কিন্তু গত ছয় মাসে ৫২টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। বিজিএমইএ চট্টগ্রামের সাবেক সহসভাপতি রাকিবুল আলম চৌধুরী জানিয়েছেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা, ব্যাংকিং জটিলতা এবং কার্যাদেশ কমে যাওয়ার ফলে অনেক কারখানা টিকে থাকতে পারেনি।
তিনি বলেন, "নন-বন্ডেড অনেক কারখানাই এ সংকটে পড়েছে। যেসব প্রতিষ্ঠান বিদেশি ক্রেতাদের কাছ থেকে সরাসরি কার্যাদেশ পেত, তারাও এখন সাব-কন্ট্রাক্টের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। ফলে উৎপাদন কমেছে, আর্থিক সংকটও বেড়েছে।"
শিল্প পুলিশের তথ্য মতে, চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থিত ৪৪টি কারখানা শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধ করতে পারবে কি না, সে নিয়ে উদ্বিগ্ন। এর মধ্যে—
কালুরঘাট বিসিক শিল্প এলাকায়: ৮টি কারখানা
সিইপিজেডে (কর্ণফুলী রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল): ৬টি
ডবলমুরিং ও পাহাড়তলী এলাকায়: ১১টি
কেইপিজেড (কর্ণফুলী ইকোনমিক জোন): ৩টি
বায়েজিদ এলাকায়: ৩টি
নগরী ও অন্যান্য উপজেলায়: ১৩টি
এই কারখানাগুলোতে মোট প্রায় ২১ হাজার শ্রমিক কাজ করেন, যাদের অধিকাংশই এখন চাকরি হারানোর আতঙ্কে ভুগছেন।
শিল্প পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, "এই ৪৪টি কারখানার বেশ কয়েকটিতে অতীতেও বেতন-বোনাস নিয়ে আন্দোলন হয়েছে। তাই আমরা বিষয়টি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।"
চট্টগ্রামের পাহাড়তলী এলাকায় বন্ধ হয়ে যাওয়া একটি কারখানার শ্রমিক সন্তোষ মণ্ডল বলেন, "কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি। নতুন কাজের খোঁজ করছি, কিন্তু কোথাও পাচ্ছি না।"
মোহরা এলাকার এক কারখানার মালিক জানান, "গত কয়েক মাসে বেশ কয়েকবার হামলা ও লুটপাট হয়েছে। নিরাপত্তার অভাবে বাধ্য হয়েই কারখানা বন্ধ করে দিতে হয়েছে।"
বিজিএমইএ’র প্রশাসক কমিটির সদস্য এমডিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, "কারখানাগুলো কাজের আদেশ কমে যাওয়ার কারণে অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে। কিন্তু কোনো মালিকই শ্রমিকদের বেতন আটকে রাখতে চান না। আমরা চেষ্টা করছি, যাতে শ্রমিক অসন্তোষ না হয়।"
শিল্প পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. জসীম উদ্দিন বলেন, "আমরা মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করছি। আশা করছি, ঈদের আগেই বেতন-বোনাস পরিশোধের ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে।"
বিজিএমইএ বলছে, পোশাক খাতের এই সংকট নিরসনে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রয়োজন। বিশেষ করে, নতুন বাজার খোঁজা, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং ব্যাংকিং জটিলতা নিরসন করতে না পারলে ভবিষ্যতে আরও কারখানা বন্ধ হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
শ্রমিকদের জীবন-জীবিকার বিষয়টিও মাথায় রেখে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেবে—এটাই এখন সবার প্রত্যাশা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ