
ফাইল ছবি
চীনের দেওয়া শূন্য-শুল্ক বাণিজ্য সুবিধা থাকলেও সেটির পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে পারছে না বাংলাদেশ। রপ্তানি পণ্যের বৈচিত্র্য কম থাকায় বিশাল বাজার থাকার পরও চীনে রপ্তানিতে বড় ধরনের প্রবৃদ্ধি আসছে না। অপরদিকে, আমদানি দ্রুতগতিতে বাড়তে থাকায় চীনের ওপর বাংলাদেশের নির্ভরতা বাড়ছে।
বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরেই চীনের অন্যতম বাণিজ্যিক অংশীদার হলেও দেশটির সঙ্গে আমদানি-রপ্তানির ভারসাম্য খুবই একপেশে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ চীন থেকে ৮.৮৯ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে, অথচ একই সময়ে রপ্তানি হয়েছে মাত্র ৪৬১.০৫ মিলিয়ন ডলার।
এর আগের অর্থবছরেও চীনে রপ্তানির পরিমাণ এক বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়নি। তখন বাংলাদেশ চীন থেকে ১৬.৬৩ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছিল, আর রপ্তানি করেছিল মাত্র ৭১৫.৩৭ মিলিয়ন ডলারের পণ্য। অর্থাৎ, বাণিজ্য ঘাটতির হার দ্রুত বাড়ছে।
বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য হলো পোশাক, যা চীনের চাহিদার তুলনায় খুবই নগণ্য। কারণ চীন নিজেই বিশ্বের বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ এবং বৈশ্বিক বাজারে তাদের অংশীদারিত্ব ৩১ শতাংশেরও বেশি। চীনের অভ্যন্তরীণ পোশাক বাজারের আকার প্রায় ৩৫০ বিলিয়ন ডলার হলেও তারা বছরে মাত্র ১০ বিলিয়ন ডলারের পোশাক আমদানি করে।
বাংলাদেশের অন্যতম বড় সমস্যা হলো রপ্তানিযোগ্য পণ্যের সীমিত পরিসর। প্রধানত তৈরি পোশাকই সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয়, অন্যদিকে খাদ্যপণ্য ও কৃষিজাত পণ্য রপ্তানির সুযোগ থাকলেও সেই বাজারও পুরোপুরি কাজে লাগানো যাচ্ছে না। বিজিএমইএ প্রশাসক হোসেনের মতে, চীনা আমদানিকারকরা বাংলাদেশ থেকে কাঁঠাল, আম, পেয়ারা ও ইলিশ আমদানিতে আগ্রহ দেখালেও যথাযথ নীতিগত সহায়তা না থাকায় এই খাতে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি আসছে না।
অন্যদিকে, বাংলাদেশের আমদানির একটি বড় অংশ চীন থেকে আসছে, যার মধ্যে সুতা, কাপড়, তুলা, খাবার ও মূলধনী যন্ত্রপাতি অন্যতম। বর্তমানে বাংলাদেশের বস্ত্রশিল্পের জন্য কৃত্রিম সুতা ও কাপড় আমদানিতে চীনের ওপর ব্যাপক নির্ভরতা রয়েছে।
চীনা বিনিয়োগ নিয়ে গবেষণা করা প্রতিষ্ঠান র্যাপিডের চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক মনে করেন, বাংলাদেশে কৃত্রিম সুতা ও কাপড় উৎপাদনে চীনা বিনিয়োগ বাড়ানো গেলে দেশটি থেকে আমদানি নির্ভরতা কমানো সম্ভব। তিনি বলেন, "বাংলাদেশে চীনা উদ্যোক্তারা সরাসরি কারখানা করলে শুধু সুতা নয়, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, সোলার প্যানেল, সেমিকন্ডাক্টর ও মাইক্রোচিপ খাতেও নতুন সম্ভাবনা তৈরি হবে।"
বর্তমানে চীনের বিনিয়োগ মূলত অবকাঠামো প্রকল্পের মধ্যে সীমাবদ্ধ। অর্থনীতিবিদদের মতে, বাংলাদেশের উচিত চীনের সঙ্গে যৌথ ব্যবসায়িক সম্পর্ক জোরদার করা। বাংলাদেশ-চীন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (বিসিসিসিআই) সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ খোরশেদ আলম মনে করেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও জ্বালানি সংকটের কারণে চীনা বিনিয়োগকারীরা পিছিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে, প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের আসন্ন চীন সফরে প্রায় পাঁচ বিলিয়ন ডলারের নতুন চীনা বিনিয়োগ পরিকল্পনার আলোচনা হতে পারে বলে জানা গেছে। এছাড়া, বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিকে (এফটিএ) আরও বিস্তৃত করে বিনিয়োগ চুক্তিতে রূপান্তর করা হলে উভয় দেশই উপকৃত হতে পারে।
বাংলাদেশ যদি রপ্তানি পণ্যের বৈচিত্র্য বাড়াতে পারে, তাহলে চীনের বিশাল বাজারের একটি অংশও কাজে লাগানো সম্ভব হবে। এছাড়া, দীর্ঘমেয়াদি বাণিজ্য ভারসাম্য বজায় রাখতে হলে কৃত্রিম সুতা ও প্রযুক্তি খাতে চীনা বিনিয়োগ বাড়ানোর ওপর জোর দিতে হবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ