
ছবি: সংগৃহীত
চলতি মাসের প্রথম ২৪ দিনেই বাংলাদেশের প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) একটি নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসীরা ২৭৫ কোটি ডলার সমপরিমাণ অর্থ পাঠিয়েছেন, যা গত বছরের ডিসেম্বরে ২৬৪ কোটি ডলার রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে। এর ফলে রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পুনরায় ২০ বিলিয়ন ডলারের সীমানা অতিক্রম করেছে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ মার্চ পর্যন্ত গড়ে প্রতিদিন প্রবাসীরা ১১ কোটি ৪৫ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। এভাবে চলতি মাসের শেষ সাত দিনেও এই প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে, মাস শেষে রেমিট্যান্সের পরিমাণ ৩.৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়াতে পারে। গত বছর মার্চে এই সময়কালে রেমিট্যান্স ছিল ১৫৫ কোটি ডলার, যা পুরো মাসে ছিল ২০০ কোটি ডলারেরও কম। বর্তমানে চলতি মাসের রেকর্ড প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধির দিকে ইঙ্গিত করছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান জানিয়েছেন, "বর্তমান সরকার অর্থ পাচার প্রতিরোধে বিভিন্ন কার্যকরী উদ্যোগ নিয়েছে, যা রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। পাশাপাশি, ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠিয়ে প্রণোদনা পাওয়া যাচ্ছে, যা খোলাবাজারের তুলনায় অনেক বেশি।"
এছাড়া, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ২৪ মার্চ পর্যন্ত মোট ২ হাজার ১২৪ কোটি ডলার প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৬১ কোটি ডলার বা ২৭.৭০ শতাংশ বেশি। এটি একটি উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি, যা গত বছরের করোনাভাইরাস মহামারির পর থেকে প্রবাসী আয়ের জন্য একটি বড় সাফল্য হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে।
রিজার্ভ পরিস্থিতি আরও স্থিতিশীল হয়ে উঠেছে, যেখানে গতকাল মঙ্গলবার দিনশেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০.০৯ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে এখন আর রিজার্ভে বড় ধরনের অবনতি হয়নি। বিশেষ করে, রিজার্ভ থেকে ধারাবাহিকভাবে ডলার বিক্রি বন্ধ হয়ে গেছে, যার ফলে রিজার্ভ এখন স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। এছাড়া, ১৭৫ কোটি ডলার পরিশোধের পর রিজার্ভ পুনরায় ২০ বিলিয়ন ডলারের ওপরে উঠেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি ও রিজার্ভের স্থিতিশীলতার পেছনে সরকারের অর্থ পাচার প্রতিরোধ ও প্রবাসী আয় বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন উদ্যোগের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এ ছাড়া, দেশের রপ্তানি আয়ও বাড়ছে, যা বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে স্বস্তি ফিরিয়ে এনেছে।
প্রবাসী আয় বৃদ্ধির এই ধারাকে ধরে রাখতে বর্তমান সরকার পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, এবং এর জন্য ১১টি যৌথ বিশেষ টিম কাজ করছে। এর মাধ্যমে বিদেশে পাচার হওয়া অর্থের ফেরত আসা ও অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় সরকারের পদক্ষেপের প্রশংসা করা হচ্ছে।
এদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংক এর মাধ্যমে প্রবাসী আয়ের এই প্রবৃদ্ধি দেশের অর্থনীতিতে নতুন আশা এবং সম্ভাবনা তৈরি করেছে, যা ভবিষ্যতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আরও শক্তিশালী করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ