
ছবি: সংগৃহীত
দেশে নতুন বিনিয়োগের জোয়ার আনতে আজ সোমবার (৭ এপ্রিল) থেকে রাজধানীতে শুরু হয়েছে চার দিনব্যাপী ‘বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট ২০২৫’। দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটের বড় পরিবর্তনের পর এই সম্মেলনকে ধরা হচ্ছে ভবিষ্যতের দিকনির্দেশক হিসেবে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ তুলে ধরতে চায় নিজেদের রূপান্তর, সম্ভাবনা এবং আগামী দশকের উন্নয়ন পরিকল্পনা।
রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আয়োজিত এই সামিটের আয়োজক বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। বিশ্বের ৫০টি দেশের ৫৫০ জনের বেশি বিনিয়োগকারী, বিশ্লেষক ও ব্যবসায়ী এতে অংশ নিচ্ছেন। সম্মেলনের অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘুরে দেখানো হবে সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের।
বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, ‘এই সামিটে আমরা শুধু এখনকার নয়, আগামী ১০ বছরের বাংলাদেশের সম্ভাবনার চিত্র তুলে ধরব। বিশ্বকে দেখাব, আমরা কতটা প্রস্তুত উন্নয়নের নতুন ধাপে পৌঁছাতে।’
তিনি জানান, এবার সামিটে শুধু অর্থনৈতিক পরিকল্পনা নয়, বিশ্বব্যাংক, আইএলও এবং এমনকি নাসার সঙ্গেও গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। এতে বোঝা যায়, শুধু শিল্প-বাণিজ্যই নয়, প্রযুক্তি ও জ্ঞানের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অংশীদারদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।
আগামী দিনের বিনিয়োগ পরিবেশ যেন স্থিতিশীল হয়—এই বার্তা দিতে সামিটে তিনটি বড় রাজনৈতিক দলকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এটা একদিকে যেমন বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জনের প্রচেষ্টা, অন্যদিকে রাজনৈতিক ঐক্যের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক কাঠামো নিশ্চিত করার ইঙ্গিত।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ঘাটতি এবং ব্যাংক খাতের কিছুটা অস্থিরতা স্বীকার করে বিডার চেয়ারম্যান বলেন, ‘এসব সমস্যা অস্বীকার করছি না, কিন্তু এগুলোকে কাটিয়ে ওঠার পরিকল্পনা এবং উদ্যোগও আছে আমাদের।’ তিনি জানান, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈঠকে জ্বালানি রপ্তানি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। এতে করে ভবিষ্যতে মধ্যপ্রাচ্যনির্ভরতা কমবে, যা দেশের শিল্পায়ন প্রক্রিয়ায় গতি আনবে।
আগামী ৯ এপ্রিল এই সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন জাতীয় উপদেষ্টা পরিষদের প্রধান প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বিগত বছরগুলোতে আন্তর্জাতিক পরিসরে যাঁর নেতৃত্ব বাংলাদেশের ভাবমূর্তি গড়তে ভূমিকা রেখেছে, এবারও সেই আস্থার প্রতীক হয়ে তিনি হাজির থাকছেন এই আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে।
বাংলাদেশ এখন আর শুধু পোশাক খাতনির্ভর অর্থনীতি নয়। প্রযুক্তি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব, অবকাঠামো ও মানবসম্পদ উন্নয়নে দেশ নতুনভাবে ভাবছে। ‘বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট ২০২৫’ বিশ্বকে সেই পরিবর্তনের বার্তা দিতে চায়— একটি প্রস্তুত বাংলাদেশ, একটি সম্ভাবনার বাংলাদেশ।
বাংলাবার্তা/এমএইচ