
ছবি: সংগৃহীত
বিশ্ব অর্থনীতির অনিশ্চয়তা, ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা ও মার্কিন বাণিজ্য নীতির প্রভাবে স্বর্ণের বাজারে চলছে নজিরবিহীন উত্থান। বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে, আর তার সরাসরি প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের বাজারেও। দেশে প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ৬৩ হাজার ২১৪ টাকায় পৌঁছেছে— যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
বিশ্ববাজারে বর্তমানে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ৩,২৩৫.৮৯ ডলার, যা সর্বশেষ রেকর্ডে ৩,২৪৫.২৮ ডলার স্পর্শ করেছিল। ফিউচার মার্কেটে এই দাম দাঁড়িয়েছে ৩,২৪৪.৬ ডলার। এমন প্রেক্ষাপটে বিশ্লেষকরা বলছেন, খুব শিগগিরই স্বর্ণের দাম ৩,৫০০ ডলারে পৌঁছাতে পারে।
বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা স্বর্ণকে পুনরায় সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বিনিয়োগ মাধ্যম হিসেবে সামনে এনেছে। উইজডমট্রির পণ্য কৌশলবিদ নীতেশ শাহ বলেন, “বাণিজ্যযুদ্ধ, ট্রাম্পের শুল্কনীতি, ডলারের দুর্বলতা—সবকিছুই স্বর্ণকে বিনিয়োগকারীদের কাছে নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করছে।”
অন্যদিকে, টেস্টিলাইভের গ্লোবাল ম্যাক্রো প্রধান ইলিয়া স্পিভাক মনে করেন, “এই মুহূর্তে ডলারের দুর্বলতা স্বর্ণের শক্তিশালী প্রত্যাবর্তনের মূল কারণ।” তাঁর মতে, বিনিয়োগকারীরা এখন মার্কিন ট্রেজারির চেয়ে স্বর্ণকেই বেশি নিরাপদ মনে করছেন।
দেশের বাজারে এই দাম বাড়ার পেছনে কাজ করছে স্বর্ণ পাচারের ঝুঁকি প্রতিরোধ এবং আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মূল্য নির্ধারণের কৌশল। বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) জানিয়েছে, মূল্যবৃদ্ধি না করলে চোরাচালানের ঝুঁকি বাড়ে, যা স্বর্ণ শিল্পের জন্য হুমকি।
বাজুসের সহ-সভাপতি মাসুদুর রহমান বলেন, “চলতি বছর এখন পর্যন্ত আমরা ১৫ বার স্বর্ণের দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছি, যা বাজার পরিস্থিতির চাহিদা ও আন্তর্জাতিক দামের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়েছে।” তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, “বর্তমান প্রবণতা অব্যাহত থাকলে এ বছরই ভরিপ্রতি স্বর্ণের দাম ২ লাখ টাকা ছুঁতে পারে।”
তবে এই দাম বৃদ্ধির ফলে বাজারে বেচাকেনা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। তাঁতিবাজারের এক স্বর্ণ ব্যবসায়ী সুরঞ্জন জানান, “বিক্রি ৭০-৮০ শতাংশ কমে গেছে। বড় ব্র্যান্ডও ক্রেতা সংকটে রয়েছে।”
বিশ্ববাজারে যখন এই উত্থান অব্যাহত, তখনই যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্যযুদ্ধ, ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার বিষয়ে অনিশ্চয়তা, ইউক্রেন যুদ্ধ এবং মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাত—সবকিছু মিলে একটি নতুন অর্থনৈতিক বাস্তবতা তৈরি করেছে, যেখানে স্বর্ণকে আবারও ‘বিশ্বব্যাপী নিরাপদ সম্পদ’ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ