
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের আঞ্চলিক বাণিজ্য অবকাঠামোতে ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা প্রত্যাহার যে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে, তা প্রকাশ্যে আনলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
বুধবার (১৬ এপ্রিল) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি জানান, ভারতের এই একতরফা সিদ্ধান্তের কারণে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে বিপুল ব্যয় বেড়েছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলের ফলে অতিরিক্ত পরিবহন ও সরবরাহ ব্যয় বাবদ দেশের অর্থনীতির ওপর চাপ পড়েছে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা।
অতিরিক্ত ব্যয় সরকারের মাথাব্যথা
বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, “ভারত ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল করায় বাণিজ্য ক্ষেত্রে বাংলাদেশের খরচ বেড়েছে। টাকার হিসাবে যেটি প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা। এটি শুধু সরকারেরই নয়, বেসরকারি আমদানি-রপ্তানিকারকদের জন্যও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে এবং এই বাড়তি খরচ কীভাবে কমানো যায়, তা নিয়ে নানা ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, সরকার আন্তঃদেশীয় পরিবহন ও করিডর ব্যবস্থাপনায় বিকল্প পথ ও নতুন বাণিজ্যিক চুক্তির সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছে, যাতে ভবিষ্যতে কোনো নির্দিষ্ট দেশের উপর অতিমাত্রায় নির্ভর করতে না হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপও বড় উদ্বেগ
একই অনুষ্ঠানে শেখ বশিরউদ্দীন যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত সম্পর্কেও বক্তব্য রাখেন।
তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি পণ্যের ওপর যে একপেশে শুল্ক আরোপ করেছে, তা নিঃসন্দেহে দুশ্চিন্তার বিষয়। তবে ইতোমধ্যেই তারা ৯০ দিনের জন্য এই শুল্ক আরোপ স্থগিত রেখেছে। এই সময়টিকে কাজে লাগিয়ে সরকার কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির সমাধান করতে চায়।”
উপদেষ্টা বলেন, মার্কিন বাজার বাংলাদেশের পোশাক খাতের অন্যতম প্রধান রপ্তানি গন্তব্য। সেখানে যদি শুল্ক বাড়ে, তাহলে তা শুধু পোশাক নয়, দেশের সার্বিক রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতেই নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এ জন্য প্রয়োজনীয় কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করা হচ্ছে।
মার্কিন বাণিজ্য ঘাটতি কমানো দূরাশা নয়
বাণিজ্য ঘাটতি প্রসঙ্গে শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যকার বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি দ্রুত কমার কোনো সুযোগ আপাতত নেই। তবে আমরা অর্থনৈতিক সক্ষমতা এবং নতুন বাজার সম্প্রসারণের কৌশল কাজে লাগিয়ে ধীরে ধীরে এই ঘাটতি কমিয়ে আনতে চাই।”
তিনি জানান, সরকার এরইমধ্যে আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, পূর্ব ইউরোপের বেশ কিছু দেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক আলোচনা জোরদার করেছে। এসব অঞ্চলে বাংলাদেশের পণ্যের সম্ভাবনা মূল্যায়ন করে নতুন রপ্তানি পথ খোলার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
চালের দাম নিয়ে আশাবাদ
খাদ্যপণ্যের বাজারে সাধারণ মানুষের চাপ কমাতে চালের মজুত পরিস্থিতি ও মূল্য নিয়েও কথা বলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, “সরকারি গুদামে চালের যথেষ্ট মজুত রয়েছে। বাজারে নতুন ধানের সরবরাহ বাড়ছে। আশা করছি, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে চালের দাম স্বাভাবিক হয়ে আসবে।”
এছাড়াও খাদ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার বিভিন্ন জায়গায় মনিটরিং ব্যবস্থা চালু করেছে এবং কৃত্রিম সংকট তৈরির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্ক আরোপ—এই দুই আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পরিস্থিতি বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তবে সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত, কৌশলগত এবং বহুমুখী পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানানো হয়েছে। বিকল্প বাণিজ্য পথ খোঁজা, কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে শুল্ক সংকটের সমাধান এবং দেশীয় বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য যে পরিকল্পনাগুলো নেওয়া হচ্ছে, সেগুলোর বাস্তবায়নই এখন মূল চাবিকাঠি।
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের বক্তব্য অনুযায়ী, সরকার আশাবাদী যে, এই চ্যালেঞ্জগুলো দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করে দেশের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ