
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে মোট রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৬ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) নির্ধারিত হিসাব পদ্ধতি BPM6 অনুসারে এই রিজার্ভের পরিমাণ ২১ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলার। এই দুটি ভিন্ন সংখ্যার মধ্যে পার্থক্য থাকলেও সামগ্রিকভাবে রিজার্ভ পরিস্থিতিতে কিছুটা উন্নতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) রাজধানীতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান এই তথ্য প্রকাশ করেন। তিনি জানান, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পরিস্থিতি কিছুটা চাঙা হয়ে উঠেছে। এর পেছনে প্রধান অবদান রাখছে প্রবাসী আয়ের ঊর্ধ্বগতি এবং বাণিজ্য ভারসাম্যে কিছুটা স্থিতিশীলতা।
তবে, আইএমএফের সঙ্গে চলমান ঋণ কর্মসূচির আওতায় জুন মাসের মধ্যে নিট রিজার্ভের একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হবে বাংলাদেশকে। সেটি হলো ১৭ বিলিয়ন ডলারের কিছুটা বেশি। অথচ বর্তমানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে নিট রিজার্ভ রয়েছে প্রায় ১৬ বিলিয়ন ডলার, অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রা থেকে এখনো প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ঘাটতি মূলত আমদানি দায় পরিশোধ, বৈদেশিক ঋণের কিস্তি এবং সরকারি উন্নয়ন খাতে ডলার খরচজনিত কারণে হয়ে থাকতে পারে। তবে আশার কথা হলো, গত কয়েক মাসে বৈদেশিক আয়ের সবচেয়ে বড় উৎস—প্রবাসী আয়—নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে।
বিশেষ করে ২০২৫ সালের মার্চ মাসে প্রবাসীরা বাংলাদেশে পাঠিয়েছেন ৩২৯ কোটি মার্কিন ডলার, যা দেশের ইতিহাসে এক মাসের মধ্যে প্রাপ্ত সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, এই প্রবাসী আয়ের ধারা অব্যাহত থাকলে সামনের মাসগুলোতে রিজার্ভ আরও বাড়তে পারে এবং নিট রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ সম্ভব হতে পারে।
এরইমধ্যে দেশের ব্যাংকগুলোতে ডলারের সরবরাহ বেড়েছে। বৈদেশিক লেনদেনের চাপে ব্যাংকগুলো দীর্ঘদিন ডলারের সংকটে থাকলেও, বর্তমানে অনেক ব্যাংক ডলার উদ্বৃত্ত অবস্থায় রয়েছে। ফলে তারা সেই উদ্বৃত্ত ডলার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বিক্রি করছে, যার কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ বাড়ছে।
এদিকে, টাকার বিপরীতে ডলারের মূল্যহার কিছুটা স্থিতিশীল হওয়ায় বৈদেশিক লেনদেনে চাপ কিছুটা কমেছে। এছাড়া রপ্তানি আয় এবং বিদেশি সহায়তার প্রবাহ বাড়ানোর লক্ষ্যে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, সামগ্রিক অর্থনীতি বিশেষ করে মুদ্রানীতিগত স্থিতিশীলতা, আমদানি-রপ্তানি ভারসাম্য, এবং বিনিয়োগ প্রবাহ ঠিক রাখতে হলে রিজার্ভের পর্যাপ্ততা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই আইএমএফের শর্ত পূরণ ও দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে হলে আগামী মাসগুলোতে রিজার্ভ আরও বাড়াতে হবে।
পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে এবং রেমিট্যান্স ও রপ্তানি প্রবাহ অব্যাহত থাকলে, জুনের মধ্যে আইএমএফ নির্ধারিত নিট রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ সম্ভব বলে আশা করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
উল্লেখ্য, আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংক্রান্ত সূচকগুলো নির্দিষ্ট মাত্রায় পৌঁছাতে না পারলে ঋণের পরবর্তী কিস্তি পাওয়া নিয়ে জটিলতা তৈরি হতে পারে। তাই বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয় একযোগে এই লক্ষ্যে কাজ করছে।
সামনের মাসগুলোতে রেমিট্যান্স, রপ্তানি আয় এবং বৈদেশিক সহায়তার গতিপ্রবাহ—এই তিনটি দিকের ওপর নির্ভর করবে রিজার্ভ পরিস্থিতির ভবিষ্যৎ গতি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকও সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিচ্ছে, যাতে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত চাপের মুখে না পড়ে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ