
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের আগামী বাজেট হবে সাত লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার। যদিও প্রতিবছর বাজেটের আকার বাড়ে, এবারের বাজেট আগের বছরের মূল বাজেটের তুলনায় কিছুটা কম হতে যাচ্ছে। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেট ছিল সাত লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। তবে সরকারের নীতিনির্ধারণী মহল পরবর্তী বাজেটের আকার সম্পর্কে কিছুটা পরিবর্তন এনেছে, কারণ চলমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং আন্তর্জাতিক ঋণদাতাদের পূর্বাভাস এর জন্য বাধ্য করেছে।
অন্তর্বর্তী সরকার আগামী অর্থবছরের জন্য ছয় শতাংশ উচ্চাভিলাষী জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের প্রাথমিক পরিকল্পনা থেকে সরে আসতে পারে। সরকার এখন পাঁচ দশমিক পাঁচ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের দিকে এগোচ্ছে, কারণ আন্তর্জাতিক ঋণদাতারা বিশেষ করে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) আগামী অর্থবছরের জন্য বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫.১ শতাংশ হওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন মন্তব্য করেছেন যে, দক্ষিণ এশিয়ার গড়ের তুলনায় বাংলাদেশে ছয় শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি হওয়া কঠিন, এবং সরকারের এমন সিদ্ধান্ত দেশীয় ও আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক বাস্তবতা বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলির কারণে সরকারের এ সিদ্ধান্ত অত্যন্ত বাস্তবসম্মত বলে মনে করা হচ্ছে।
এদিকে, মঙ্গলবার অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে রাজস্ব সমন্বয় পরিষদের বৈঠকে নতুন জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা, মূল্যস্ফীতি ও আগামী বাজেটের আকার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। বৈঠকে উপস্থিত কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে, আগামী বাজেটে সরকারের মূল লক্ষ্য হচ্ছে মূল্যস্ফীতি কমানো। মূলত, সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা কমানোর উদ্দেশ্য হলো মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মতে, আগামী বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা সাড়ে ছয় শতাংশ নির্ধারণ করা হবে, যা এডিবির পূর্বাভাস অনুযায়ী, বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি আগামী অর্থবছরে আট শতাংশের কাছাকাছি থাকবে। চলতি অর্থবছরের জন্য সরকারের মূল্যস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রা ছিল আট শতাংশ, তবে এডিবি পূর্বাভাস দিয়েছিল যে তা ১০.২ শতাংশ হতে পারে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, মার্চ মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯.৩৫ শতাংশ, যা আগের মাসের তুলনায় সামান্য বেশি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারের প্রচেষ্টা থাকবে, যদিও চলমান অর্থনৈতিক মন্দার কারণে রাজস্ব আদায়ের ওপর চাপ রয়েছে। এর ফলে বাজেট ঘাটতি আরও বাড়তে পারে, যা স্থানীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা তৈরি করতে পারে, যা মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি করতে পারে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা আশা করছেন যে, আগামী অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি দুই লাখ ২০ হাজার কোটি টাকার নিচে থাকবে, এবং এই ঘাটতির মধ্যে সাড়ে ছয় শতাংশ মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে। মোট বাজেটের মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আকার হবে দুই লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা, যা গত বছরের বার্ষিক বরাদ্দের তুলনায় কিছুটা কম, তবে এর মাধ্যমে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের অব্যাহত প্রগ্রেস নিশ্চিত করার আশা করা হচ্ছে।
চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের বার্ষিক উন্নয়ন বরাদ্দ ছিল দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা, পরে তা সংশোধন করে দুই লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। সরকারের এই নতুন বাজেট পরিকল্পনা দেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতায় সামঞ্জস্য রেখে নেওয়া হয়েছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ