
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বাজারে যুক্তরাষ্ট্রে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে এক উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানায়, জুলাই-মার্চ সময়কালে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি যুক্তরাষ্ট্রে ১৭ দশমিক ২৩ শতাংশ বেড়েছে, যা দেশের রপ্তানি বাজারে একটি বড় ধরনের সাফল্য হিসেবে দেখা যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি বেড়েছে ১৭ শতাংশ
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, এই নয় মাসে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ থেকে পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৫.৭৪ বিলিয়ন ডলার মূল্যের, যা বাংলাদেশের মোট পোশাক রপ্তানির ১৮.৯৭ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধি অবাক করা হলেও এটি এসেছে নতুন শুল্ক আরোপের পরিপ্রেক্ষিতে, যখন উদ্বেগের পারদও চড়েছিল। কিন্তু এর পরও বাংলাদেশের পোশাকের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি আগের বছরের তুলনায় অনেক বেশি।
বাংলাদেশের মোট পোশাক রপ্তানি
এ বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে বাংলাদেশ মোট ৩০.২৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০.৮৪ শতাংশ বেশি। এই পরিসংখ্যান প্রমাণ করে যে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প বিশ্ববাজারে আরও প্রতিযোগিতামূলক এবং লাভজনক হয়ে উঠেছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি
অন্যদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়নে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ১৫ দশমিক ০৭ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা বাংলাদেশের মোট রপ্তানির ৪৯.৮২ শতাংশ। ইউরোপীয় বাজারে বাংলাদেশি পোশাকের অন্যতম শীর্ষ আমদানিকারক দেশ ছিল জার্মানি, যেটি ৩.৮ বিলিয়ন ডলারের পোশাক আমদানি করেছে। এরপর স্পেন, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, ইতালি এবং পোল্যান্ড রয়েছে। বিশেষ করে, নেদারল্যান্ডসে পোশাক রপ্তানি ২৩.১৫ শতাংশ বেড়েছে।
অন্যান্য বাজারেও রপ্তানি বৃদ্ধি
এছাড়া, যুক্তরাজ্যে ৩ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা মোট রপ্তানির ১১ দশমিক ১০ শতাংশ। তবে, যুক্তরাজ্যের বাজারে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ১৪ শতাংশ ছিল, যা তুলনামূলকভাবে কম। তবে, অন্য গন্তব্যগুলোতে যেমন জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ও ভারত—এখানেও বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
তুরস্কে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি দাঁড়িয়েছে ৩৫৭ দশমিক ২২ মিলিয়ন ডলার এবং মেক্সিকোতে ২৫১ দশমিক ২২ মিলিয়ন ডলার রপ্তানি হয়েছে। তবে, রাশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মালয়েশিয়া রপ্তানি কমেছে, বিশেষত রাশিয়ায় যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে রপ্তানি হ্রাস পেয়েছে।
বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের ভবিষ্যত
বিশ্বব্যাপী পোশাক রপ্তানি খাতের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ক্রমেই শক্তিশালী হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং অন্যান্য বাজারে এর প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশের জন্য একটি বড় অর্থনৈতিক সাফল্য। তবে ভবিষ্যতে, পোশাক শিল্পের জন্য আরও প্রতিযোগিতামূলক হতে হলে বাংলাদেশের পোশাক প্রস্তুতকারকদের প্রযুক্তি ও উৎপাদন দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে।
এর পাশাপাশি, নতুন বাজার খোঁজা, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে, শুল্ক সুবিধা এবং পণ্যের গুণগত মানের উন্নয়ন বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি খাতের অগ্রগতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
সার্বিক বাজার অবস্থা
বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের পোশাকের চাহিদা বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে, বিশেষত উচ্চমানের তৈরি পোশাকের ক্ষেত্রে। তবে, আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা, শুল্ক এবং অন্যান্য নীতি পরিবর্তন বাংলাদেশের পোশাক শিল্পকে আরও নতুন বাজারের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে সাহায্য করবে।
সর্বোপরি, বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের উজ্জ্বল ভবিষ্যত নিশ্চিত করতে শুল্ক ও রপ্তানি নীতির পুনর্বিবেচনা এবং আঞ্চলিক বাণিজ্য চুক্তির সুযোগগুলি আরও কাজে লাগানো অত্যন্ত জরুরি।
বাংলাবার্তা/এমএইচ