
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ সরকার এবং বিশ্বব্যাংক গ্রুপের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (আইডিএ) বুধবার দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের জন্য ঋণ চুক্তি সই করেছে। উক্ত চুক্তির আওতায় বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের দুটি বড় প্রকল্পে মোট ৮৫০ মিলিয়ন ডলার ঋণ প্রদান করবে। প্রকল্প দুটি হলো "বে টার্মিনাল মেরিন ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (বিটিএমআইডিপি)" এবং "সামাজিক সুরক্ষা জোরদার প্রকল্প (এসএসপিআইআরআইটি)".
এই চুক্তি সইয়ের জন্য বাংলাদেশের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী এবং বিশ্বব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর গেইল এইচ. মার্টিন, ওয়াশিংটন ডিসিতে চুক্তি পত্রে সই করেন।
বে টার্মিনাল প্রকল্প:
বিটিএমআইডিপি প্রকল্পের অধীনে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বন্দরটির সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং আরও আধুনিক সুবিধা প্রদান করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্পে ৬৫০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটির বাস্তবায়নকালে বাংলাদেশের নৌপরিবহণ খাতের সক্ষমতা বৃদ্ধি, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে প্রতিযোগিতা ক্ষমতা উন্নয়ন এবং বন্দর ব্যবস্থাপনাতে আধুনিক প্রযুক্তি সংযোজন করা হবে।
এই প্রকল্পটির বাস্তবায়নকাল ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে ২০৩১ সালের জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরটি বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান বন্দর, এবং এর উন্নতি দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। প্রকল্পটির মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বহুগুণ বাড়ানো হবে, যা বাংলাদেশকে আরও একটি শক্তিশালী আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সহায়ক হবে।
সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প:
এসএসপিআইআরআইটি প্রকল্পের অধীনে ২০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ প্রদান করা হয়েছে, যার লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশের দুঃস্থ জনগণের জন্য আরও শক্তিশালী সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা। এই প্রকল্পটি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাস্তবায়িত হবে, এবং এটি বিশেষত দরিদ্র জনগণ, বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী এবং অন্যান্য অস্বচ্ছল জনগণের জন্য সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করবে।
এসএসপিআইআরআইটি প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা খাতে নতুন মাত্রা যুক্ত হবে, যা সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনাকে বাস্তবায়নে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। এটি বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে সাহায্য করবে, এবং দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করবে।
প্রকল্পের মোট খরচ এবং ঋণের পরিমাণ:
বিশ্বব্যাংকের ঋণচুক্তি দুটি বাস্তবায়ন করা হবে নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে সমাজসেবা অধিদপ্তর ও অর্থ বিভাগের তত্ত্বাবধানে। একনেক সভায় ২০ এপ্রিল অনুমোদিত ১৬টি প্রকল্পের মধ্যে এটি দুটি প্রকল্প রয়েছে, যার মোট ব্যয় ২৪ হাজার ২৪৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৬ হাজার ৭১৯ কোটি ৭৩ লাখ টাকা ঋণ হিসেবে নেওয়া হবে, বাকি অর্থ সরকারী অর্থায়ন এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে যোগান দেওয়া হবে।
একনেক সভা এবং অন্যান্য প্রকল্পের অনুমোদন:
এদিন একনেক সভায় ১৬টি প্রকল্প অনুমোদন পায়, যার মধ্যে ১৩টি নতুন প্রকল্প এবং তিনটি সংশোধিত প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত ছিল। এর মধ্যে বে টার্মিনাল মেরিন ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট এবং সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পও ছিল, যা দেশের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
এর পাশাপাশি আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে শিক্ষা, কৃষি, পরিবহন, স্বাস্থ্য খাতে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প রয়েছে।
বিশ্বব্যাংক ও সরকারের সম্পর্ক:
বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের উন্নয়ন সহযোগী। বিশ্বব্যাংক গ্রুপের আর্থিক সাহায্য এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা খাতের উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। এই দুটি প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশের অগ্রগতির চিত্র আরও শক্তিশালী হবে এবং সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনার বাস্তবায়নে সহায়ক হবে।
বিশ্বব্যাংক প্রতিনিধির বক্তব্য:
ঋণ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রেইজার। তিনি বলেন, "এই প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে বাংলাদেশে অবকাঠামো উন্নয়ন ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে, যা দেশের সামগ্রিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবে। বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের সাথে তার সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে এবং আমরা আশা করি এই প্রকল্পগুলো বাংলাদেশের অর্থনীতি ও জনগণের জন্য ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসবে।"
বিশ্বব্যাংকের ঋণচুক্তির আওতায় এই দুইটি প্রকল্প বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন দিগন্তের সূচনা হতে পারে। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে প্রকল্পগুলোর সফল বাস্তবায়ন দেশের অর্থনৈতিক শক্তি বৃদ্ধি, সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নয়ন এবং সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের ক্ষেত্রে অগ্রগতি সাধন করবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ