
ছবি: সংগৃহীত
চলতি বছরের এপ্রিল মাসের প্রথম ২৬ দিনে প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২২৭ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১২২ টাকা ধরে) এর পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ২৭ হাজার ৭০৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ গড় হিসাবে প্রতিদিন দেশে এসেছে ৮ কোটি ৭৩ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স।
রোববার (২৭ এপ্রিল) বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, এপ্রিলের প্রথম ২৬ দিনে মোট ২২৭ কোটি ১০ লাখ ৪০ হাজার ডলার দেশে এসেছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৮৫ কোটি ৩৮ লাখ ডলার। বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ১১ কোটি ৯৪ লাখ ১০ হাজার ডলার। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে সবচেয়ে বেশি অর্থ—১২৯ কোটি ৩৫ লাখ ৭০ হাজার ডলার। অন্যদিকে বিদেশি খাতের ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৪২ লাখ ৭০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশ্লেষণে মাসজুড়ে বিভিন্ন সপ্তাহের রেমিট্যান্স প্রবাহের চিত্রও উঠে এসেছে।
-
এপ্রিলের প্রথম ৫ দিনে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ১১ কোটি ৯১ লাখ ৯০ হাজার ডলার।
-
৬ থেকে ১২ এপ্রিল সময়ে এসেছে ৯৩ কোটি ৩১ লাখ ৮০ হাজার ডলার।
-
১৩ থেকে ১৯ এপ্রিলের মধ্যে দেশে পাঠানো হয়েছে ৬৬ কোটি ৬৩ লাখ ৬০ হাজার ডলার।
-
আর ২০ থেকে ২৬ এপ্রিল সময়ে এসেছে ৫৫ কোটি ২৩ লাখ ২০ হাজার ডলার।
এই প্রবাহ থেকে দেখা যাচ্ছে, এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে তুলনামূলক বেশি রেমিট্যান্স এসেছে, তবে মাসের শেষভাগে কিছুটা কমেছে।
এর আগে, সদ্য সমাপ্ত মার্চ মাসে দেশে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছিল—৩২৮ কোটি ৯৯ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার। দেশের ইতিহাসে এটি একক মাসের সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স প্রবাহ। টাকায় এর পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৪০ হাজার ১৩৮ কোটি।
রেকর্ড গড়ার দিক দিয়ে গত বছরের ডিসেম্বরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছিল, যার পরিমাণ ছিল প্রায় ২৬৪ কোটি ডলার। এরপর ফেব্রুয়ারি মাসে আসে প্রায় ২৫৩ কোটি ডলার, যা ছিল তৃতীয় সর্বোচ্চ।
২০২৪ সালের পুরো বছর জুড়ে বাংলাদেশে মোট রেমিট্যান্স এসেছিল ২ হাজার ৬৮৮ কোটি ৯১ লাখ মার্কিন ডলার। প্রতিটি মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ ছিল নিম্নরূপ:
-
জানুয়ারি: ২১১ কোটি ৩১ লাখ ৫০ হাজার ডলার
-
ফেব্রুয়ারি: ২১৬ কোটি ৪৫ লাখ ৬০ হাজার ডলার
-
মার্চ: ১৯৯ কোটি ৭০ লাখ ৭০ হাজার ডলার
-
এপ্রিল: ২০৪ কোটি ৪২ লাখ ৩০ হাজার ডলার
-
মে: ২২৫ কোটি ৪৯ লাখ ৩০ হাজার ডলার
-
জুন: ২৫৩ কোটি ৮৬ লাখ ডলার
-
জুলাই: ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার
-
আগস্ট: ২২২ কোটি ৪১ লাখ ৫০ হাজার ডলার
-
সেপ্টেম্বর: ২৪০ কোটি ৪৭ লাখ ৯০ হাজার ডলার
-
অক্টোবর: ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ ৮ হাজার ডলার
-
নভেম্বর: ২১৯ কোটি ৯৫ লাখ ১০ হাজার ডলার
-
ডিসেম্বর: ২৬৩ কোটি ৮৭ লাখ ৮০ হাজার ডলার
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সরকার নির্ধারিত নগদ প্রণোদনা, বৈধ চ্যানেলে অর্থ পাঠানোর উৎসাহমূলক নীতিমালা এবং ব্যাংকিং খাতের উন্নতির ফলে সাম্প্রতিক সময়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে।
তবে বাজার বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন যে, রেমিট্যান্স বৃদ্ধির এই প্রবণতা ধরে রাখতে হলে অভিবাসী শ্রমিকদের দক্ষতা উন্নয়ন, বৈধ প্রবাসী পাঠানোর হার বাড়ানো এবং প্রবাসে বাংলাদেশি শ্রমিকদের চাকরি স্থায়িত্ব নিশ্চিত করার দিকে আরও মনোযোগ দিতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, চলতি মাসের বাকি দিনে রেমিট্যান্স প্রবাহ অব্যাহত থাকলে এপ্রিল মাসেও রেকর্ডধারার একটি রেমিট্যান্স প্রবাহের সম্ভাবনা রয়েছে, যদিও মার্চের সর্বোচ্চ রেকর্ড ভাঙা সম্ভব হবে না বলে মনে করা হচ্ছে। তবু বছরের প্রথম চার মাসের সামগ্রিক চিত্র ইতিবাচক এবং দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পরিস্থিতির জন্য এটি বড় একটি স্বস্তির ইঙ্গিত দিচ্ছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ