
সংগৃহীত
গত বছরের ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত চলমান গণঅভ্যুত্থানের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ১২২ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসে সংঘটিত হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক গঠিত তথ্য অনুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) অনুসন্ধান কমিটির আহ্বায়ক ও ঢাবির আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মাহফুজুল ইসলাম তদন্ত প্রতিবেদন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খানের কাছে হস্তান্তর করেন।
সিন্ডিকেট সভায় উত্থাপন ও শাস্তির সুপারিশ
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সূত্র জানিয়েছে, পরবর্তী সিন্ডিকেট সভায় প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হবে এবং অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হবে।
কমিটি জানিয়েছে, তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হবে।
প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা গ্রহণের ঘোষণা
কাজী মাহফুজুল ইসলাম বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সরাসরি কোনো ফৌজদারি মামলা করতে পারে না। তবে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যথাযথ প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা নেবে।’
প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, হামলায় জড়িত অনেক সাবেক শিক্ষার্থীর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। এ কারণে, অপরাধের মাত্রা বিবেচনায় তাদের একাডেমিক সনদ বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে।
ক্যাম্পাসের বাইরের হামলাকারীদের শনাক্তকরণ
অনুসন্ধানে কমিটি ক্যাম্পাসের বাইরের বেশ কয়েকজন হামলাকারীকেও চিহ্নিত করেছে। ঢাবি কর্তৃপক্ষ তাদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলে জানানো হয়েছে।
সহিংসতার ধরন ও তদন্ত পদ্ধতি
তদন্ত প্রতিবেদনে সহিংসতাকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে—
- নারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা
- ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যাওয়ার সময় আহতদের ওপর হামলা
- সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম, ক্যাম্পাসভিত্তিক সংবাদ পোর্টাল এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সংগৃহীত ভিডিও বিশ্লেষণ করে তদন্ত পরিচালনা করেছে কমিটি।
কাজী মাহফুজুল ইসলাম বলেন, ‘নিরপরাধ কেউ যেন অভিযুক্ত না হয়, তা নিশ্চিত করতে আমরা ভিডিও প্রমাণ যাচাইয়ের সময় একাধিক ডিজিটাল ফ্যাক্ট-চেকিং টুল ব্যবহার করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘উপস্থিত প্রমাণগুলো স্পষ্ট করে যে এটি শুধুই শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ ছিল না, বরং পূর্বপরিকল্পিত হামলা ছিল।’
নারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও সিসিটিভি ফুটেজের অভাব
তদন্ত কমিটির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘২০২৪ সালের ১৫ জুলাই সংঘটিত সহিংসতার সবচেয়ে ভয়াবহ দিক ছিল নারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে আহতদের ওপর আক্রমণ এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে যাওয়া শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা। এমনকি জরুরি বিভাগের ভেতরে আহতদের চিকিৎসায় বাধা দেওয়া হয়েছে।’
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে কমিটির সদস্যরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিসিটিভি ক্যামেরার কোনো ফুটেজ পাওয়া যায়নি, কারণ সংরক্ষিত হার্ডড্রাইভ উধাও ছিল।
এক প্রশ্নের উত্তরে কমিটির আহ্বায়ক বলেন, ‘হামলার সময় বাসের ভেতরে আশ্রয় নেওয়া নারী শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে, যৌন নিপীড়নের সুনির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ মেলেনি। যদিও নারী শিক্ষার্থীদের ওপর যৌন হয়রানির ঘটনাগুলো প্রতিবেদনে নথিভুক্ত করা হয়েছে।’
উপাচার্যের প্রতিক্রিয়া
প্রতিবেদন গ্রহণের পর ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর চালানো হামলা শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস নয়, বরং গোটা দেশের ইতিহাসের একটি নৃশংস ঘটনা।’
এ তদন্ত প্রতিবেদন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় উত্থাপনের পর অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি ইঙ্গিত দেন।
বাংলাবার্তা/এমএইচ