
ছবি: সংগৃহীত
ঢাকার বনানীর প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত এক মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটিরই আটজন ছাত্রকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহত ছাত্র জাহিদুল ইসলাম পারভেজের ভাই হুমায়ুন কবির বাদী হয়ে এ মামলাটি করেছেন। রোববার (২০ এপ্রিল) মামলার বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন বনানী থানার উপ-পরিদর্শক (অপারেশন) এ কে এম মইনুদ্দিন।
পুলিশ জানায়, অভিযুক্ত আটজনই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ছাত্র। এদের মধ্যে মাহাথি, মেহেরাব এবং আবুজর গিফারী এলএলবি ও ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী। তারা মূল অভিযুক্ত হিসেবে মামলায় নাম উঠে এসেছে। তাদের সঙ্গেই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও পাঁচ ছাত্র রয়েছে অভিযুক্ত তালিকায়, যাদের নাম এখনও বিস্তারিতভাবে প্রকাশ করা হয়নি।
এ বিষয়ে এসআই মইনুদ্দিন বলেন, “ঘটনাটি আমরা গুরুত্বসহকারে তদন্ত করছি। অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।”
নিহত জাহিদুল ইসলাম পারভেজ প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২২৩তম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন। বয়স মাত্র ২৩ বছর। তার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলায়।
ঘটনার বর্ণনায় জানা যায়, শুক্রবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের গলিতে চা-সিঙ্গারা খেতে গিয়েছিলেন জাহিদুল। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনজন ছাত্রীও উপস্থিত ছিলেন। অভিযোগ উঠেছে, ওই ছাত্রীরা দাবি করেন—তাদের ‘ইভটিজিং’ করা হয়েছে। এরপর তারা তাদের পরিচিত কয়েকজন ছাত্রকে ফোন করে ঘটনাস্থলে ডাকেন।
এ অভিযোগকে কেন্দ্র করে বিষয়টি তখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে গড়ায়। প্রশাসন তাৎক্ষণিকভাবে উভয়পক্ষকে ডেকে ঘটনাটির আপাত মীমাংসা করে দেয়।
কিন্তু তাতেও ঘটনার রেশ থেকে যায়। অভিযোগ রয়েছে, মীমাংসার পরও মাহাথি, মেহেরাব এবং আবুজর গিফারী স্থানীয় হাজারীপাড়া এলাকার কিছু তরুণকে সঙ্গে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে জাহিদুলের ওপর হামলা চালান।
জানা গেছে, হামলার শিকার হয়ে দৌড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেন জাহিদুল। কিন্তু সেখানে পৌঁছানোর আগেই তিনি ধারালো অস্ত্রের আঘাতে গুরুতরভাবে আহত হন। ধারণা করা হচ্ছে, মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটানো হয়।
জাহিদুলকে তাৎক্ষণিক হাসপাতালে নেওয়া হলেও চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এই মর্মান্তিক ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ ঘটনার জন্য দোষীদের কঠোর শাস্তির আশ্বাস দিয়েছে। একই সঙ্গে ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা জোরদার করার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে।
এদিকে নিহত জাহিদুলের পরিবার এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে। তারা বলেন, “আমাদের ছেলে কোনো ভুল করেনি, তবুও তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের একজনও যেন আইনের ফাঁক গলে বের হতে না পারে।”
ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত আট ছাত্র পলাতক রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। তাদের ধরতে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের মাঝে উত্তেজনা বিরাজ করছে। অনেকেই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে একটি প্রতিবাদ কর্মসূচিরও প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
ঘটনার বিস্তারিত ও তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে আরও তথ্য সময়ের সঙ্গে জানানো হবে বলে জানিয়েছে বনানী থানা পুলিশ।
বাংলাবার্তা/এমএইচ