
ছবি: সংগৃহীত
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ভিসি অধ্যাপক মুহাম্মদ মাছুদ এবং প্রো-ভিসি অধ্যাপক এস কে শরীফুল আলম পদত্যাগ করেছেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে এই পদত্যাগের ঘটনা ঘটলো। বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) সকালে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা দুজনের পদত্যাগের তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, তাদের পদত্যাগপত্র গৃহীত হওয়ার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
কুয়েটের ভিসি এবং প্রো-ভিসির পদত্যাগের ঘটনা শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ঘটল। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বেশ কিছুদিন ধরে ভিসি ও প্রো-ভিসির পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ ও আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিল। বিশেষ করে ২২ এপ্রিল বিকেল থেকে ২৯ শিক্ষার্থী আমরণ অনশনে বসে। তারা দাবি করেছিলেন, উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ মাছুদ এবং প্রো-ভিসি অধ্যাপক এস কে শরীফুল আলমের পদত্যাগ করা উচিত। আন্দোলনকারীদের দাবি ছিল, কুয়েটের প্রশাসনিক অস্থিরতা ও সহিংসতার ঘটনায় তাদের পদত্যাগ করা প্রয়োজন। তাদের দাবির এক পর্যায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কুয়েটের আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে ভিসির পদত্যাগের আলটিমেটাম দেন। শিক্ষার্থীদের একাত্মতার ফলে তাদের আন্দোলন এক গুরুত্বপূর্ণ মোড় নেয় এবং অবশেষে ৫৮ ঘণ্টা পর তাদের অনশন ভেঙে যায়।
কুয়েটের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন মূলত ১৮ ফেব্রুয়ারি ঘটে যাওয়া সহিংসতার ঘটনাকে কেন্দ্র করে। ওই দিন ছাত্রদল-যুবদল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়, যাতে অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হয়। এই সহিংস ঘটনার পর ২৫ ফেব্রুয়ারি কুয়েটের সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম ও হলগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। শিক্ষার্থীরা কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ১৩ এপ্রিল বন্ধ থাকা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে, যা পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত করে তোলে।
১৪ এপ্রিল রাতে কুয়েটের ১০১তম জরুরি সিন্ডিকেট সভায় ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারির সহিংসতার ঘটনায় ৩৭ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসমাজে ক্ষোভ তৈরি হয় এবং শিক্ষার্থীরা দাবি করতে থাকেন, এই পদক্ষেপ পুনর্বহাল করা উচিত নয়। এতে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে।
কুয়েটের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন আরো তীব্র হয়ে ওঠে, এবং পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ২২ এপ্রিল বিকেল থেকে আমরণ অনশনে বসা ২৯ শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেয়। শিক্ষার্থীদের পদত্যাগের দাবির ফলে ৫৮ ঘণ্টা পর অনশন ভাঙে।
এদিকে, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ও ২৪ এপ্রিল এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায় যে, কুয়েটের উপাচার্য ও সহ-উপাচার্যকে অব্যাহতি প্রদানের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। একইসঙ্গে, দুটি পদে নতুন নিয়োগের জন্য সার্চ কমিটি গঠন করা হবে। এছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত কার্যক্রম চালু রাখার জন্য একজন জ্যেষ্ঠ অধ্যাপককে সাময়িকভাবে উপাচার্যের দায়িত্ব দেওয়া হবে।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এবং তাদের একতার ফলে এই পদত্যাগের ঘটনা ঘটেছে। এই আন্দোলন বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্ষমতার আসন ধরে রাখা প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের উপর একটি শক্তিশালী বার্তা পাঠিয়েছে যে, শিক্ষার্থীদের দাবিগুলি উপেক্ষা করা সম্ভব নয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দ্রুত পদক্ষেপ এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীদের সফলতা এসেছে।
এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালু রাখতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। গত বুধবার সিন্ডিকেট সভায় ৩৭ শিক্ষার্থীর সাময়িক বহিষ্কারাদেশও প্রত্যাহার করা হয়, যা শিক্ষার্থীদের জন্য বড় সান্ত্বনা। তাছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের জন্য আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
এ ঘটনা থেকে একটি স্পষ্ট বার্তা মিলেছে, যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনে কার্যকরী নেতৃত্ব এবং শিক্ষার্থীদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। কুয়েটের বর্তমান ঘটনাবলী আরও প্রমাণ করে যে, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন প্রভাব ফেলতে পারে এবং তা প্রশাসনিক সিদ্ধান্তকে পরিবর্তন করতে সহায়তা করতে পারে। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘমেয়াদী সাফল্যের জন্য প্রশাসনিক কাঠামোর সমন্বয় এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের প্রয়োজনীয়তার প্রমাণ।
এভাবে, কুয়েটের বর্তমান পরিস্থিতি একটি রাজনৈতিক, শিক্ষাগত এবং প্রশাসনিক সংকটের সম্মুখীন হয়ে, শেষে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ফলস্বরূপ প্রশাসনকে পদত্যাগ করতে হয়েছে, যা দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও ব্যাপক আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ