
ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছে যে, সাত কলেজের অধিভুক্তি চূড়ান্তভাবে বাতিল করা হয়েছে এবং এই কলেজগুলোকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে পৃথকীকরণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পঞ্চম সিন্ডিকেট সভায় এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্তভাবে অনুমোদন পায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান সভার সভাপতিত্ব করেন, এবং সভা শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) মুন্সী শামস উদ্দিন আহম্মদ সাংবাদিকদের এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানান।
তিনি জানান, ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সাত কলেজে আর ভর্তি কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হবে না। এর মাধ্যমে সাত কলেজের জন্য সম্মানজনক পৃথকীকরণের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, “এই পৃথকীকরণের পরবর্তী শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা সাত কলেজের জন্য প্রস্তাবিত কাঠামোর অধীনে অনুষ্ঠিত হবে। ঢাবি কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনে এসব কলেজকে সহায়তা প্রদান করবে।”
মুন্সী শামস উদ্দিন আহম্মদ আরও বলেন, এই সিদ্ধান্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের পর্যালোচনার পরে সিন্ডিকেট সভায় অনুমোদন পেয়েছে। তিনি জানান, এই সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)-এ পাঠানো হবে।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি, ইউজিসি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাবনা পাঠায়, যার মধ্যে সাত কলেজের বিষয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে সাময়িক ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে, ২ মার্চ, ইউজিসি কর্তৃক প্রেরিত সুপারিশপত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্মতি প্রদান করে এবং ঢাবি কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা প্রদান করে।
২০১৭ সালে সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়েছিল। ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ এবং সরকারি তিতুমীর কলেজ—এই সাতটি কলেজের অধিভুক্তি ছিল। বর্তমানে এসব কলেজে প্রায় দুই লাখ শিক্ষার্থী রয়েছে, এবং তাদের ভবিষ্যত নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠেছিল।
এদিকে, সাত কলেজের নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া চলমান। ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি (ডিসিইউ) নামে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে ইউজিসি গত ১৬ মার্চ প্রস্তাব পাঠায়, যা বর্তমানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হওয়ার আগ পর্যন্ত সাত কলেজ চলবে অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসনের অধীনে। এই প্রশাসনের কাঠামো চলতি মাসের শেষের দিকে ঘোষণা করা হবে।
এই পদক্ষেপের মাধ্যমে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা ও ভর্তি প্রক্রিয়ার নতুন দিগন্ত খুলবে, এবং একাধিক কলেজের মধ্যে একীকরণের পরিণতি হিসেবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে অধিকতর স্বাধীনতা ও সুনির্দিষ্ট কাঠামো প্রদান করা হবে।
এ সিদ্ধান্তটি কিছু ছাত্র-শিক্ষক মহলে প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে, যাদের অনেকেই মনে করছেন, এই পদক্ষেপটি কলেজগুলোর ভবিষ্যত স্বচ্ছতা এবং উচ্চ শিক্ষার মান বাড়ানোর জন্য এক বড় পদক্ষেপ হতে পারে। তবে, এই পরিবর্তনগুলোর বাস্তবায়ন কিভাবে হবে এবং এর ফলে কীভাবে শিক্ষার্থীদের সুযোগ-সুবিধা বাড়বে, তা সময়ের সাথে পরিস্কার হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ জানায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে বর্তমানে যারা প্রাতিষ্ঠানিক ও একাডেমিক সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন, তারা সেগুলির মাধ্যমে দ্রুত নতুন পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবেন, এমন একটি সুনির্দিষ্ট পন্থা গ্রহণ করা হবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ