
ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন পর আবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের দাবি জোরালোভাবে তুলেছেন। এক সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৯৬ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করেন, বর্তমান সময়ে ডাকসু নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এই নির্বাচন দ্রুত সম্পন্ন করা প্রয়োজন।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্যোগে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন সফলভাবে আয়োজনে গঠিত পরামর্শক কমিটির তত্ত্বাবধানে এই মতামত জরিপ পরিচালিত হয়। ২০২৫ সালের ২৩ মার্চ থেকে জরিপের কাজ শুরু হয় এবং এটি পরিচালনা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেল। জরিপে অংশগ্রহণের জন্য শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ ইনস্টিটিউশনাল ই-মেইল ব্যবহার করে নির্ধারিত প্ল্যাটফর্মে লগ-ইন করতে হয়। মোট এক হাজার ৭৪৩ জন শিক্ষার্থী এই জরিপে অংশ নেন, যা একটি শক্তিশালী নমুনা বলে বিবেচিত হচ্ছে।
জরিপের ফলাফলে উঠে এসেছে, শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ — প্রায় ৫৯ দশমিক ২৭ শতাংশ — বিশ্বাস করেন, ডাকসু নির্বাচনের জন্য ছাত্র-শিক্ষকদের যৌথভাবে নির্বাচন কমিশন গঠনই সবচেয়ে কার্যকর ও নিরপেক্ষ পন্থা হবে। তাদের মতে, এভাবে গঠিত কমিশন সব পক্ষের আস্থা অর্জন করতে পারবে এবং নির্বাচন নিয়ে কোনো ধরনের বিতর্কের অবকাশ থাকবে না। অপরদিকে প্রায় ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মনোনীত কমিশনও সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করতে সক্ষম হবে।
তবে এ ক্ষেত্রেও ছাত্রসমাজের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ আরও বড় স্বচ্ছতা ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার পক্ষে মত দিয়েছেন। শিক্ষার্থীরা চায়, নির্বাচনের প্রতিটি ধাপ যেন অবাধ, নিরপেক্ষ এবং সর্বজনগ্রাহ্য হয়।
জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় ৭৫ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করেন, আগামী তিন মাসের মধ্যে ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে সেটি সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য ও শান্তিপূর্ণ হবে। তাদের মতে, সময়ক্ষেপণ না করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই নির্বাচন আয়োজন করা জরুরি, যাতে শিক্ষার্থীরা আগ্রহ হারিয়ে না ফেলেন এবং নির্বাচন নিয়ে বিভ্রান্তি বা অনাস্থা সৃষ্টি না হয়।
এদিকে জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থী মনে করেন, ভোট গ্রহণের জন্য একাডেমিক ভবনগুলো সবচেয়ে উপযোগী স্থান হবে। তাদের মতে, একাডেমিক ভবনে ভোট আয়োজন করলে প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থাও আরও শক্তিশালী করা যাবে। পরবর্তী পছন্দের তালিকায় রয়েছে সংশ্লিষ্ট হলের প্রাঙ্গণ বা ভবন, যেখানে আবাসিক শিক্ষার্থীরা সুবিধাজনকভাবে ভোট দিতে পারবেন।
নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য নিরাপত্তার গুরুত্বও জরিপে বিশেষভাবে উঠে এসেছে। প্রায় ৫২ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করেন, কঠোর প্রশাসনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা জরুরি। তাদের মতে, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনের জন্য ক্যাম্পাসজুড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সতর্ক অবস্থান থাকা অপরিহার্য। অন্যদিকে, শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পছন্দ হলো ভোট গ্রহণ ও ফলাফল ঘোষণার পুরো প্রক্রিয়া ডিজিটালাইজ করা। তাদের মতে, অনলাইন ভোটিং অথবা ডিজিটাল ভোট গণনার মাধ্যমে নির্বাচন আরও স্বচ্ছ, দ্রুত এবং নির্ভরযোগ্য হবে।
জরিপে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাত্র ২ শতাংশের সামান্য বেশি মনে করেন যে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে ডাকসু নির্বাচন প্রয়োজনীয় নয়। তবে বিশ্লেষকদের মতে, এই সংখ্যা নগণ্য এবং সামগ্রিকভাবে পুরো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের অভিমত ডাকসু নির্বাচনের পক্ষে স্পষ্টভাবে একমত।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জরিপের ফলাফল বিশ্লেষণ করে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, পরামর্শক কমিটির সুপারিশ এবং শিক্ষার্থীদের অভিমত মাথায় রেখে ডাকসু নির্বাচনের সময়সূচি এবং কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু হতে পারে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সময়মতো এবং স্বচ্ছ ডাকসু নির্বাচন কেবল ছাত্ররাজনীতির চর্চা পুনরুদ্ধারই করবে না, বরং শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, নেতৃত্বগুণ ও মত প্রকাশের অধিকারকে আরও মজবুত করবে।
প্রসঙ্গত, ডাকসু নির্বাচন সর্বশেষ অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৯ সালে। প্রায় ছয় বছর পর আবারও ডাকসু নির্বাচন আয়োজনের দাবি শিক্ষার্থীদের কণ্ঠে উঠে এসেছে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সামনে নতুন দায়িত্ব এবং প্রত্যাশার মানদণ্ড স্থাপন করেছে।
সকল পক্ষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায়, এই নির্বাচন কেবল ঢাবির জন্য নয়, বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্যও একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে — এমনটাই আশা করছে সংশ্লিষ্ট মহল।